Dhaka, Thursday | 23 October 2025
         
English Edition
   
Epaper | Thursday | 23 October 2025 | English
পাঁচ ব্যাংক নিয়ে হচ্ছে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশনের টপ এগ্রি ফুড পাইওনিয়ার পুরস্কার পেলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু
অতীতের ভুলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জামায়াত আমির
মাংস আমদানি করে দেশের ক্ষতি করতে চাই না: ফরিদা আখতার
শিরোনাম:

ঘোড়াশালে টোল প্লাজায় দুর্নীতির রাজত্ব

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ৪:৩২ পিএম  (ভিজিটর : ৪)

নরসিংদীর ঘোড়াশালের গুরুত্বপূর্ণ শহীদ ময়েজ উদ্দিন সেতু টোল প্লাজা যেন দুর্নীতির এক অঘোষিত সাম্রাজ্য। প্রতিদিন সরকারকে রাজস্ব দেওয়ার কথা যে অর্থ, তা হারিয়ে যাচ্ছে একদল অসাধু কর্মচারীর পকেটে। টোল প্লাজা এখন হয়ে উঠেছে “অর্থলুণ্ঠনের টোলহাট”—যেখানে সততা নিষিদ্ধ, আর অনিয়মই নিয়ম!

সরাসরি গিয়ে দেখা গেছে, শত শত গাড়ি টোল দিয়ে পার হচ্ছে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। ট্রাকচালক আজগর আলী রসিদ চাইতেই কর্মচারীর গলায় ভেসে আসে উদ্ধত কণ্ঠ
“ভাংতি নাই, রসিদ দরকার নাই, চলে যান।

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ চালকরা প্রতিবাদ জানালে টোলকর্মীদের সঙ্গে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, স্থানীয় জনতা টোলপ্লাজার সামনে বিক্ষোভ করে তাৎক্ষণিক তদন্তের দাবি তোলে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ চিত্র—এই টোলপ্লাজায় বছরের পর বছর ধরে চলছে রসিদবিহীন অর্থ লেনদেন, অতিরিক্ত টোল আদায় ও রাজস্ব আত্মসাৎ। জানা গেছে, কিছু অসাধু কর্মচারী নিয়মিতভাবে সরকারি টোলের পাশাপাশি গোপনে টাকা নিচ্ছে, যার এক টাকাও সরকারের খাতে জমা হচ্ছে না।

একজন অভিজ্ঞ পরিবহনচালক নাম মোঃ কবির হোসেন  বলেন,“রাতের শিফটে তো সরাসরি দর কষাকষি হয়। কত দেবেন, কতটা ছাড় পাওয়া যাবে—সবই চুক্তির মতো চলে। টোলের নাম করে লুটপাট হচ্ছে। কেউ দেখছে না, কেউ থামাচ্ছে না।”

দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে গত ২১ অক্টোবর পাঁচ কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছে। তারা হলেন—সাব্বির, ইমন হোসেন, নাসিম শেখ, মায়মুন হোসেন ও সাব্বির মোল্লা।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। স্থানীয়রা বলছেন, এরা কেবল ‘ছোট মাছ’—বড় বড় ‘গডফাদাররা’ এখনো বহাল তবিয়তে কর্তৃত্ব করছে টোলপ্লাজার ওপর।

একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী মো: কালাম মিয়া  বলেন, “নিচের কর্মচারীদের ছাঁটাই করে নাটক সাজানো হচ্ছে। আসল চক্র তো উপরেই বসে আছে—যারা সব জানে, তবু চোখ বন্ধ করে রাখে।”

সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, “রসিদবিহীন টোল আদায়ের বিষয়টি সত্য। পাঁচজনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। আরও তদন্ত চলছে, যাদের জড়িত পাওয়া যাবে, কেউ ছাড় পাবে না।”

তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন—“তদন্ত চলছে” কথাটি কতদিন চলবে?এমন তদন্ত তো বছরের পর বছর ধরে চলে, ফলাফল আসে না কখনো!

এই ঘটনার পরও কর্তৃপক্ষের নীরবতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। কেউ কেউ বলছেন, টোল প্লাজার দুর্নীতি রোধে প্রযুক্তিগত নজরদারি থাকার পরও  কিভাবে রশিদ বিহীন অর্থ লেনদেন হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।

একজন সাবেক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই দুর্নীতির জাল এত ঘন, একা একজন কর্মকর্তা তা ভাঙতে পারবে না। এখানে কেউ না কেউ ভাগ পায়, নইলে এত বছর ধরে টাকাগুলো হারিয়ে যেত কীভাবে?”

এলাকাবাসী ও যানচালকরা সরকারের কাছে উচ্চ পর্যায়ের স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের জোর দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, “চাকরিচ্যুতি যথেষ্ট নয়, যারা টাকা লুট করেছে তাদের বিচার হোক, সম্পদ জব্দ হোক।”

একজন প্রবীণ নাগরিকের তীক্ষ্ণ মন্তব্য— “এই টোলপ্লাজায় টোল নয়, চলছে চাঁদাবাজি। সরকারের টাকায় বানানো সেতু এখন কিছু দুর্নীতিবাজের ব্যক্তিগত এটিএম বুথে পরিণত হয়েছে।” তিনি আরো মনে করেন ইজারা বিহীন টোল আদায় করার কারণে এসব দুর্নীতি হচ্ছে।

ঘোড়াশাল শহীদ ময়েজ উদ্দিন সেতু টোল প্লাজা এখন দুর্নীতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনের টোলের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট হচ্ছে, অথচ প্রশাসন নীরব দর্শক।
এই দুর্নীতির মূল শেকড় না কাটলে, কেবল কয়েকজন কর্মচারীকে ছাঁটাই করে টোলপ্লাজাকে সৎ বলা যাবে না—বরং তা হবে জনগণের সঙ্গে এক প্রকার প্রহসন।

এফপি/অআ

সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝