জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিরপরাধ দাবি করে তার খালাস চেয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) মো. আমীর হোসেন।
সোমবার (২০ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক বেঞ্চে এ মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এদিনই প্রথমবারের মতো শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির পক্ষ থেকে যুক্তিতর্ক তুলে ধরা হয়।
আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে এক ব্রিফিংয়ে শেখ হাসিনার পক্ষের রাষ্ট্রীয় আইনজীবী মো. আমীর হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা নিরপরাধ। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের খালাস চাই।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সঠিক নয়। আমার অভিমত হলো, সাক্ষ্য-প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। যেহেতু সাক্ষ্য-প্রমাণে তা প্রমাণ হয়নি, সেহেতু আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের খালাস প্রত্যাশা করি।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষ শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করে। সেদিনই আদালত আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার জন্য সোমবারের দিন নির্ধারণ করেন।
এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৫৪ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছেন। এদের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়াও দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাক্ষ্য দেন। তবে মামলার মূল দুই আসামি পলাতক থাকায় তারা কোনো সাফাই সাক্ষী উপস্থাপন করতে পারেননি।
গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কের শেষ পর্যায়ে প্রধান প্রসিকিউটর মন্তব্য করেন যে, অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় শেখ হাসিনাকে ১ হাজার ৪০০ বার ফাঁসিতে ঝুলানো উচিত। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেন। পাশাপাশি, ফ্যাসিস্টের মূল হোতা ও তাদের সহযোগীদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জুলাই মাসে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ারও দাবি জানানো হয় আদালতে।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এতে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দকৃত দালিলিক প্রমাণ ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং নিহতদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে। মামলায় মোট ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। গত ১২ মে প্রধান প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তারা।
এফপি/অআ