ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। পাঁচ বছর পর এই নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ছিল প্রচারণার শেষ দিন। টানা ১২ দিনের প্রচারণা শেষে এখন অপেক্ষা ভোটগ্রহণের।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটারদের সুবিধার্থে এবার বুথের সংখ্যা বাড়িয়ে ৮১০ করা হয়েছে। মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৫ জন, যার মধ্যে প্রায় ৪৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ নারী। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রবেশপথ আজ রাত ৮টা থেকে বন্ধ থাকবে এবং তা ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত বহিরাগতদের জন্য খোলা হবে না। শুধু ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারী ও অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারীরাই প্রবেশ করতে পারবেন।
প্রথমে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করা হলেও পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শুধু ভোটের দিন, ৯ সেপ্টেম্বর, ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
শেষ দিনে ১০টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণা চালান। টিএসসি, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, মধুর ক্যানটিন, কলাভবন, মল চত্বর, বটতলাসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভোট চাওয়া হয়। নানা ধরনের পোস্টার, লিফলেট ও প্রচারসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রার্থীদের মধ্যে কেউ অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারছে না। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, আচরণবিধি ভঙ্গ হলেও কমিশন ব্যবস্থা নেয়নি। আবার শিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট অভিযোগ করে, প্রচারণার শুরুতেই তাদের এক নারী প্রার্থীর ছবি বিকৃত করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বাম-সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু অস্ত্রোপচারের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকেও হুইলচেয়ারে প্রচারণায় অংশ নেন। তিনি অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান। অন্যদিকে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল বটতলায় শপথ পাঠের আয়োজন করে, যেখানে তারা গেস্টরুম নির্যাতন ও রাজনৈতিক দমনপীড়নের সংস্কৃতি আর ফিরিয়ে আনবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।
মোট ভোটারের মধ্যে প্রায় ১৯ হাজারই নারী। রোকেয়া হল, সুফিয়া কামাল হল, বঙ্গমাতা হলসহ পাঁচটি ছাত্রী হলকে কেন্দ্র করে ভোটের বড় অংশ নির্ধারিত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। প্রার্থীরা তাই নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিশেষ প্রচারণা চালিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এখনো যেসব শিক্ষার্থী ভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেননি, তাঁদের ভোটই শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে কোন প্যানেল এগিয়ে থাকবে। বিশেষ করে রোকেয়া হল, সুফিয়া কামাল হল, জগন্নাথ হল ও জহুরুল হক হলে প্রার্থীদের নজর বেশি।
ঢাবি ক্যাম্পাসে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। আগামীকাল সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে ঠিক করবেন কারা হবে ডাকসু ও হল সংসদের নতুন নেতৃত্ব।
এফপি/রাজ