Dhaka, Monday | 8 September 2025
         
English Edition
   
Epaper | Monday | 8 September 2025 | English
নির্বাচনকালে তথ্যে প্রবাহে গণমাধ্যমকে বাধা দেওয়া হবে না: মাহফুজ আলম
আ.লীগ নেতার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা, স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
এশিয়ার খেলাপি ঋণের শীর্ষে বাংলাদেশ, ব্যাংক খাত গভীর সংকটে
শিরোনাম:

এশিয়ার খেলাপি ঋণের শীর্ষে বাংলাদেশ, ব্যাংক খাত গভীর সংকটে

প্রকাশ: রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:৫৭ এএম আপডেট: ০৭.০৯.২০২৫ ৮:৩৬ পিএম  (ভিজিটর : ৬৮)

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদন “ননপারফর্মিং লোনস ওয়াচ ইন এশিয়া ২০২৫” প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ এখন এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থার দেশ।

২০২৪ সালে দেশের মোট বিতরণকৃত ঋণের ২০ দশমিক ২ শতাংশ খেলাপি, যার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগের বছরের তুলনায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৮ শতাংশ। এডিবি জানিয়েছে, খেলাপি ঋণের এ ধরনের ঊর্ধ্বগতি দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার আর কোথাও দেখা যায়নি।

বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের ইতিহাস কয়েক দশক পুরোনো। নব্বই দশকে প্রথম বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, দুর্বল তদারকি, এবং পুনঃতফসিলের অপব্যবহার এই খাতকে ক্রমে আরও দুর্বল করে তোলে।

২০০০ সালের দিকে খেলাপি ঋণের হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। কাগজে-কলমে হার কিছুটা কমালেও প্রকৃত অর্থে ঋণ পুনরুদ্ধার হয়নি। ফলে আজ যখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঋণ শ্রেণিবিন্যাস শুরু হয়েছে, তখন প্রকৃত চিত্র ভয়ঙ্কর রূপে প্রকাশ পাচ্ছে।

ভারত কয়েক বছর আগেও খেলাপি ঋণের বড় সংকটে পড়েছিল। কিন্তু দেউলিয়া আইন সংস্কার, ব্যাংক পুনর্গঠন ও কঠোর তদারকির মাধ্যমে খেলাপি ঋণের হার নামিয়ে এনেছে ৩.৪ থেকে ২.৫ শতাংশে।

শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান সংকট কাটিয়ে ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে।

নেপাল তুলনামূলক ছোট অর্থনীতি হলেও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে ৩–৪ শতাংশে।

পূর্ব এশিয়া আরও এগিয়ে: দক্ষিণ কোরিয়ায় মাত্র ০.২ শতাংশ, চীনে গড়ে ১.৫ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১.৫–২ শতাংশ।

বাংলাদেশের ২০.২ শতাংশ খেলাপি ঋণ-এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ।

মাত্র তিন মাসে খেলাপি বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা, আর এক বছরে বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা-বৃদ্ধি ১৫১ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এ বৃদ্ধির দুটি প্রধান কারণ:

১. সাবেক সরকারের সময়ে নামে-বেনামে নেওয়া ঋণ এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
২. আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঋণ শ্রেণিবিন্যাস করায় বহু পুনঃতফসিলকৃত ঋণ এখন খেলাপির তালিকায় পড়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন- “আগের সরকার বড় ব্যবসায়ীদের ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করেছে। এতে প্রকৃত খেলাপি আড়াল হয়েছিল। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সত্যিকার তথ্য প্রকাশ করছে, তাই আসল সংকট দৃশ্যমান।”

ড. সেলিম রায়হান, সানেম নির্বাহী পরিচালক, মনে করেন- “শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি যথেষ্ট নয়। আইন প্রয়োগ, বিচারব্যবস্থার দক্ষতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। ভারতের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে খেলাপি সংকট কাটানো সম্ভব।”

এডিবি সতর্ক করেছে, বৈশ্বিক মন্দা ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আগামীতে খেলাপি ঋণের ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশ যেহেতু আমদানি ও বৈদেশিক বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতি, তাই প্রভাব হবে দ্বিগুণ।

ফলাফল হতে পারে:

আমানতকারীদের আস্থা হ্রাস

বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যাওয়া

সরকারি বন্ড ও সঞ্চয়পত্রে চাপ বৃদ্ধি

প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হওয়া

অর্থনীতিবিদরা যে সুপারিশ করেছেন:

কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ: ঋণখেলাপিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও দ্রুত বিচার।

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ: ঋণ অনুমোদন ও পুনঃতফসিলে স্বচ্ছতা।

পুনঃতফসিলের অপব্যবহার বন্ধ এবং ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত।

ঋণ পুনরুদ্ধার ট্রাইব্যুনাল সক্রিয় ও স্বচ্ছ করা।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা: বড় ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা বন্ধ করা।

আস্থা ফিরিয়ে আনা: বিনিয়োগকারীদের কাছে বার্তা দেওয়া যে ব্যাংক খাত নিরাপদ।

বাংলাদেশ এখন শুধু এশিয়ার শীর্ষ খেলাপি ঋণের দেশ নয়- এটি গোটা অর্থনীতির জন্য এক বড় সতর্কবার্তা। অর্থনীতিবিদদের মতে, সংস্কার ছাড়া এ খাতের সংকট কাটানো সম্ভব নয়। ভারতের মতো সাহসী সংস্কার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কঠোর তদারকি ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে বাঁচানো যাবে না।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝