বাঞ্ছারামপুরের বাঁশগাড়ি গ্রামের রাহিমা বেগম। দুশ্চরিত্র ও লম্পট স্বামীর অবহেলায় সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েন রাহিমা। চালিয়ে নিতে পারছিলেন না ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা। সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলের পরীক্ষার ফি জোগাড় নিয়ে একদিন শুরু হয় টানাপোড়েন। ফি দিতে না পারলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না ছেলে, এমন অবস্থায় নগদ টাকার আশায় রাস্তায় নামেন তিনি।
অটোরিকশায় প্রান্তর থেকে প্রান্তরে ছুটে চলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের রাহিমা। রিকশার চাকার সমান তালেই যেন ঘুরে তার জীবন। প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে নিজের আত্মকর্মসংস্থানের পথ বেছে নিয়েছেন এই নারী। তার এমন কাজকে সাহসিকতার গল্প হিসেবে দেখছে প্রশাসন ও স্থানীয়রা। বাঞ্ছারামপুরের আনাচে-কানাচে প্রায়ই দেখা যায় রাহিমাকে। নারী অটোরিকশা চালককে দেখে সবার মনেই প্রশ্ন জাগে, কেনই বা তিনি এমন জীবিকার পথ বেছে নিয়েছেন? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাহিমার স্বামী প্রবাসী। তবে দীর্ঘদিন খোঁজ নেয় না পরিবারের।
উপায়ন্তর না পেয়ে নিজে নিজেই শেখেন অটোরিকশা চালানো। এরপর নেমে পড়েন ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা নিয়ে। এতে প্রতিদিন ৫০০ টাকার মতো আয় করতে পারেন তিনি। তা দিয়েই কোনো রকমে চলে সংসার।
বিষয়টি নিয়ে রাহিমা বলেন, ‘কম যন্ত্রণায় তো আর রাস্তায় নামি নাই, অনেক কষ্ট সহ্য করে এই সিন্ধান্ত নিয়েছি। স্বামীর চরিত্র ভাল না, আমাদের খবর নেয় না। আমার তো বাঁচতে হবে, কে কি বললো তা দেখার প্রয়োজন নাই।’
রিকশা চালাতে গিয়ে কোনো সমস্যা হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রাহিমা বলেন, ‘রাস্তা ঘাটে তো কত জনেই কত কথাই কয়। কেউ বলে কেন রিকশা চালাই, ঠিক মতো সাইড দেয় না। অযথা বিড়ম্বনা করে। তবে অনেকে সহযোগিতাও করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিবেশীরা বলেন, রাহিমাকে প্রায়ই দেখি; নারী হয়ে রিকশা চালানো আমাদের সমাজে খুব একটা দেখা যায় না। ব্যতিক্রম এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি। সৎভাবে জীবন চালায় চালায় সে। কারো কাছে হাত পাতে না। স্বামী যদি ভালো হতো তা হলে নারী হয়ে তাকে অটোরিকশা চালাতে হতো না।
রাহিমার এমন কাজকে নারীর আত্মকর্মসংস্থানের উদাহরণ হিসেবে দেখছে প্রশাসন। ইউএনও ফেরদৌস আরা বলেন, রাহিমার এমন কাজ সত্যিই প্রশংসার। কারো কাছে হাত না পেতে নিজে সাবলম্বী হয়েছেন। নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে এক অনন্য উদাহরণ রাহিমা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে তাকে। আমার সাথে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ রাখতে বলেছি। যে কোনো সমস্যায় আমি রাহিমার পাশে আছি।
এফপি/এমআই