দীর্ঘ ৯ বছর ধরে ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায় চোখের পানি ফেলছেন গুমের শিকার সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান জনির বৃদ্ধ পিতা শেখ আব্দুর রাশেদ। কাঁদতে কাঁদতে এখন তার চোখের পানিও শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। আর ছেলেকে ফেরত পেতে এবং তার গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে আদালত থেকে আদালতে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে অসুস্থ্য শরীরও আর চলছে না। কিন্তু কোথাও কোন আশার আলো দেখছেন না তিনি। ছেলেকে ফেরত পেতে এবং ক্ষতিপূরণ দিতে তিনি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
শনিবার সকাল ১০টায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে খুলনায় মানববন্ধন ও র্যালিতে অংশ নিয়ে এ দাবি জানান তিনি।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এর আগে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে একটি র্যালি বের হয়ে পিকচার প্যালেস মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
শেখ আব্দুর রাশেদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই হিমেলের নেতৃত্বে পুলিশ জনিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর প্রায় ৯ বছরেও তার সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। ছেলেকে হারিয়ে তাদের সংসার তছনছ হয়ে গেছে। জনির মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা অভিযুক্ত সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালীন ওসি এমদাদ হোসেন ও এসআই হিমেলসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের কঠোর শাস্তি এবং জনিকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও পরিচালনা করেন অধিকার খুলনার ফোকাল পার্সন সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান। দিবসের বিবৃতি পাঠ করেন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী কেএম জিয়াউস সাদাত।
সরকারের কাছে অধিকারের পক্ষ থেকে ৬টি দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে- গুমের শিকার যেসব ব্যক্তি ফেরত আসেননি তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জনগণকে জানাতে হবে, যেসব গুমের শিকার ব্যক্তি এখনও ফিরে আসেননি, তাঁদের স্ত্রী-সন্তানরা যেন গুম হওয়া ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব পরিচালনা ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ভোগ বা বিক্রি করতে পারে- সে ব্যবস্থা করতে হবে, গুমের পর কিছু ব্যক্তিকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং পরে তাঁদের পাওয়া গেছে। তাই ভারতে এখনো গুমের শিকার কেউ আটক আছেন কি না- সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে, গুম থেকে ফিরে আসা অনেক ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। কারও ক্ষেত্রে মিথ্যা সাক্ষ্য বা নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায় করে নিম্ন আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং ভুক্তভোগীদের কারাগার থেকে মুক্তি দিতে হবে, গুমের সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার করতে হবে এবং গুম প্রতিরোধে দ্রুত আইন প্রণয়ন করতে হবে।
কর্মসূচিতে বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নুরুল হাসান রুবা, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক ঐক্যের খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী মোতাহার রহমান বাবু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহকারী মহাসচিব ও আমার দেশ'র খুলনা ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন, বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি ও মানব জমিনের খুলনা ব্যুরো প্রধান মো. রাশিদুল ইসলাম, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার, বিএফইউজের সাবেক নির্বাহী সদস্য ও কালেরকন্ঠের খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন প্রমুখ।
এফপি/রাজ