ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সবচেয়ে ব্যস্ততম ফেরিঘাট সড়কটি বৃষ্টি হলেই নদী হয়ে যায়।
২৪ আগস্ট রবিবার এক ঘণ্টার ভারি বর্ষণে বাঞ্ছারামপুর-কড়িকান্দি ফেরিঘাট সড়কের বিভিন্নস্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। এই সড়কে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। যে কারণে সড়কটির বাঁশগাড়ি থেকে কড়িকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় এলাকাটি নদীতে পরিণত হয়েছে। চলাচলে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি খানাখন্দ যুক্ত সড়কটিতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। কর্মজীবী মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রুত সড়কটি সংস্কারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এছাড়াও, বাঞ্ছারামপুরের কড়িকান্দি ফেরিঘাট-জীবনগঞ্জ বাজার সড়কের ১৮ কিলোমিটার বেহাল হয়ে পড়েছে। সড়কের বিভিন্ন জায়গার কার্পেটিং উঠে গর্ত হয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। প্রায়ই গর্তে যানবাহন আটকে দুর্ঘটনা ঘটছে।
প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, কসবা, কুমিল্লার হোমনা, তিতাস, মুরাদনগর ও দেবিদ্বার উপজেলার লোকজন ও যানবাহন যাতায়াত করছে। খানাখন্দের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ৭ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সড়ক ও জনপথের ৫১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে সদর থেকে হোমনা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার। কড়িকান্দি ফেরিঘাট থেকে পূর্বহাটি সল্পা সেতু পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার। কড়িকান্দি ফেরিঘাট থেকে জীবনগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার। এসব সড়ক ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, কসবা, কুমিল্লার মুরাদনগর, দেবিদ্বার, হোমনা ও তিতাস উপজেলার লোকজন যাতায়াত করে। বিশেষ করে কড়িকান্দি থেকে ফেরি পার হয়ে স্বল্প সময়ে ঢাকায় যাওয়া যায়। এ কারণে সড়কটি পাশের উপজেলার চালক ও যাত্রীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সড়কটির অবস্থা বেহাল। বিশেষ করে কড়িকান্দি ফেরিঘাট-বাঞ্ছারামপুর সদর-জীবনগঞ্জ বাজার সড়কের ২৩ কিলোমিটার। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তের কারণে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে সংস্কারের উদ্যোগ নেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের।
কড়িকান্দি-বাঞ্ছারামপুর-জীবনগঞ্জ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এসব গর্তের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ছয়ফুলাকান্দি বাজারে উত্তর ও দক্ষিণ পাশের গর্তগুলো এতই গভীর যে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বৃষ্টি হলে তলিয়ে যায়। দশআনী মোড়ে ও পাশে রয়েছে বড় দুটি গর্ত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। আইয়ুবপুর গ্রামের বিভিন্ন জায়গায়, চরছয়ানী ও কানাই নগর, দুর্গারামপুর-জগন্নাথপুর ব্রিজের পূর্ব পাশের রাস্তায়ও গর্ত তৈরি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় এ সড়ক। তখন যান চলাচল করতে গিয়ে প্রায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক জয়নাল মিয়া জানান, অনেক বছর ধরে এই রাস্তার অবস্থা বেহাল। মাঝেমধ্যে অল্প একটু করে ইট ফেলে। এতে আরও যান চলাচল ব্যাহত হয়। বৃষ্টির দিনে যানবাহন নিয়ে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। প্রায়ই গর্তের মধ্যে গাড়ি আটকে যায়।
নবীনগরের মাইক্রোবাসের চালক হাসান মিয়া বলেন, এই সড়ক ব্যবহার করে প্রায়ই ঢাকায় যাতায়াত করি; কিন্তু রাস্তার বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত থাকার কারণে চলাচল করতে অনেক কষ্ট হয়। একটু বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকার কারণে গাড়ি আটকে যায় গর্তে। অনেক দিন ধরে এ অবস্থা থাকলেও সংস্কার না হওয়ায় বাড়ছে আমাদের দুর্ভোগ।
আইয়ুবপুর গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন শাহীন জানান, কয়েক বছর ধরে আইয়ুবপুর বাজারের সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে গাড়ি আটকে যাচ্ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে লোকজন। তিনি নিজেও কয়েকবার রিকশা দিয়ে যাওয়ার সময় গর্তে পড়ে আহত হয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাঞ্ছারামপুর কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমানের বলেন, কড়িকান্দি ফেরিঘাট থেকে জীবনগঞ্জ বাজারে যাতায়াতের রাস্তার অনেক জায়গায় বৃষ্টির কারণে ভেঙে গর্ত তৈরি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গর্তগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। আইয়ুবপুরে সড়কের সাথে বাড়িঘরের কারণে রাস্তা থেকে পানি নামতে না পারায় পানি জমে যাচ্ছে। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সব ঠিক হয়ে যাবে।
এফপি/রাজ