চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. বাচ্চু মিয়া এখন পরিচিত জল্লাদ বাচ্চু নামে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তিনি গড়ে তুলেছেন চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য। স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবাই তার সিন্ডিকেটের দাপটে জর্জরিত।
গত জানুয়ারিতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেন বাচ্চু। পোস্টিংয়ের বিনিময়ে দেওয়া অর্থের ভাগ পেয়েছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়ছার, সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীন ও বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম। যোগদানের পর থেকেই তিনি সেই অর্থ বহুগুণে উত্তোলনের জন্য বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু করেন।
বাচ্চু মিয়ার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে শক্তিশালী সিন্ডিকেট- ফরেস্টার পিংকি, ফরেস্ট গার্ড জসিম, চুন্নু হাওলাদার, জাকির, রাজু ও কায়ছার এর সদস্য। নগর রেঞ্জের দায়িত্বে থাকলেও তারা মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, বোয়ালখালীসহ আশপাশের এলাকায় বিশেষ টহলের নামে চাঁদাবাজি চালায়। সরকারি অস্ত্র ব্যবহার করে রাতভর মাইক্রোবাসে ঘুরে কাঠ ও আসবাববাহী গাড়ি থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রম।
এই চাঁদাবাজি নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছেন রাসেল, সুমন, শহিদ, হাশেম, গুরা মিয়া, আলাউদ্দিন প্রমুখ সহযোগীরা। শুধু হাটহাজারী ও ফৌজদারহাট চেক পোস্ট থেকেই প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার অবৈধ স্লিপ মানি পৌঁছায় বাচ্চুর হাতে। একইভাবে নগরের শতাধিক লাইসেন্সবিহীন স-মিল থেকে মাসিক ২০ হাজার টাকা, বৈধ স-মিল মালিকদের কাছ থেকেও নানা অজুহাতে টাকা আদায় করা হয়। ফার্নিচার দোকানগুলোকেও ছাড় দেননি তিনি- প্রতিটি থেকে মাসিক দুই হাজার টাকা নিয়মিত তোলা হচ্ছে।
বন কর্মকর্তা বাচ্চুর আরেকটি বড় অস্ত্র হলো তার মোটরসাইকেল বাহিনী। ফরেস্ট গার্ড রাজু ও জাকিরের নেতৃত্বে এ বাহিনী নগরে ঘুরে বেড়ায়। কারও বাসায় অল্প কিছু কাঠ বা পুরনো আসবাব পেলেও টাকা আদায় করা হয়। এ ছাড়া উন্নয়নকাজেও রয়েছে তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। কোনো কোটেশন বা টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সব অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বদলির ভয় দেখিয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদের কাছ থেকেও তিনি নিয়মিত টাকা আদায় করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাচ্চু মিয়া বেশিরভাগ অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ- বন রক্ষক হয়েও বাচ্চু মিয়া পরিণত হয়েছেন চাঁদাবাজির সম্রাটে। তার দাপটে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ আজ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
এফপি/রাজ