ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে এক এতিম কিশোরী নিজের জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিল। রেখে গেল এক টুকরো সুইসাইড নোট, যেখানে লেখা ছিল “এই পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকার কোনো মূল্য নেই। আমার উপর আর অত্যাচার হবে। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা আমার জন্য কোনো দাম নেই। আমার জন্য অন্য কেউ দায়ী নয়। আমি ইচ্ছায় চলে যাচ্ছি। এই জীবন আর ভালো লাগছে না।”
মাত্র কয়েক লাইনের এই বেদনাভরা লেখা যেন হাহাকার তুলে দিয়েছে সবার মনে। ছোট্ট হাতের কাঁপা কাঁপা অক্ষরে লেখা এই চিরকুট আজ সমাজের চোখে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে—কেন একজন অসহায় এতিম কিশোরীর কাছে জীবন এত ভারী হয়ে উঠল?
স্থানীয়রা জানায়, জন্ম থেকেই অনাথ হওয়ায় মেয়েটি সবসময় সমাজ ও আত্মীয়তার অবহেলার শিকার ছিল। কারও কাছে তার ছিল না ভালোবাসা, ছিল না আশ্রয়- বরং ছিল কেবল দুঃখ, অবহেলা আর কষ্ট। নিজের যন্ত্রণা কেউ বুঝবে না জেনেই হয়তো সে লিখে গেছে শেষ কথা।
তার মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং একটি সামাজিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। আজও সমাজে অসংখ্য এতিম শিশু বেড়ে উঠছে অবহেলা আর বঞ্চনার মধ্যে। কারও চোখে তাদের জন্য মমতা নেই, কারও হাতে নেই স্নেহের ছায়া।
মেয়েটির এই আত্মহত্যা যেন নীরব চিৎকার করে বলছে- “জীবনকে সুন্দর করে তুলতে হলে ভালোবাসা, সহানুভূতি আর দায়িত্ববোধের বিকল্প নেই।”
স্থানীয় মানুষেরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। কেউ বলছেন, “বাঁচানো যেত যদি একটু ভালোবাসা পেতো।” আবার কেউ বলছেন, “এত অল্প বয়সে এমন মৃত্যু খুবই হৃদয়বিদারক।”
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। তবে রেখে যাওয়া সেই চিরকুটই এখন সবার মনে অশ্রু আর অনন্ত বেদনার গল্প হয়ে বেঁচে আছে।
এফপি/রাজ