Dhaka, Sunday | 17 August 2025
         
English Edition
   
Epaper | Sunday | 17 August 2025 | English
পাথর লুটে যোগসাজশ ছিল প্রশাসনের: রিজওয়ানা হাসান
পাবনা-৩ আসনে মনোনয়ন যুদ্ধ, মাঠ গরম সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণা
বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিন কান্তি দে’র মৃত্যুতে প্রশাসনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
কিশোরগঞ্জে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত
শিরোনাম:

অনলাইন জুয়ার ফাঁদে চট্টগ্রাম

প্রকাশ: রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৫১ পিএম  (ভিজিটর : ১২)

চট্টগ্রামের নগরী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম সব জায়গাতেই এখন এক অদৃশ্য নেশার নাম অনলাইন জুয়া। হাতে একটি স্মার্টফোন থাকলেই তরুণেরা ঢুকে পড়ছে বিভিন্ন অ্যাপে। ক্যাসিনো, স্লট মেশিন, বেটিং কিংবা কার্ড গেম- সবকিছুই এখন তাদের কাছে হাতের নাগালে। দিনে দিনে এ ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে স্কুল–কলেজ পড়ুয়া ছাত্র থেকে শুরু করে নগরীর বেকার যুবক, এমনকি কর্মজীবী তরুণরাও। ফলে গ্রাম ও শহর মিলিয়ে অসংখ্য পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে, আর সমাজে নেমে আসছে নীরব বিপর্যয়।

একসময় নগরীর কিছু এলাকায় এ ধরনের জুয়ার আসক্তি দেখা যেত। কিন্তু এখন চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, সাতকানিয়া, বোয়ালখালী, বাঁশখালী, মীরসরাই ও পটিয়ার গ্রামীণ জনপদ যেমন আক্রান্ত, তেমনি শহরের বিভিন্ন পাড়া–মহল্লার তরুণরাও সমানভাবে জড়িয়ে পড়ছে। মোবাইল ফোনে মাত্র কয়েক ক্লিকেই তারা ঢুকে পড়ছে এসব অ্যাপে। শুরুতে অল্প কিছু টাকা খোয়ালেও ধীরে ধীরে ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়াচ্ছে হাজারে, তারপর লাখে।

সাতকানিয়ার এক ভুক্তভোগী অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলে কলেজে পড়ে। কয়েক মাস ধরে লক্ষ্য করছিলাম সংসারের খরচ কোথায় যেন মিলিয়ে যাচ্ছে। পরে জানতে পারি সে মোবাইলে অনলাইন জুয়া খেলে হাজার হাজার টাকা হারিয়েছে। এখন সে ঋণের বোঝায় জর্জরিত। পড়াশোনার আগ্রহ নেই, সারাদিন হতাশ হয়ে থাকে। আমরা অভিভাবকরা দিশেহারা হয়ে গেছি।”

পরিবারে অশান্তি, ঋণের চাপ ও হতাশার পাশাপাশি সমাজেও দেখা দিচ্ছে অস্থিরতা। নগরীর বিভিন্ন এলাকাতেও একই অবস্থা। অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে, কেউবা চাকরির টাকা খুইয়ে বসেছে। সমাজ বিশেষজ্ঞ শেখ মোহাম্মদ ইমরান এ প্রসঙ্গে বলেন, “যুবসমাজের মধ্যে দ্রুত অর্থ উপার্জনের প্রবণতা বেড়ে গেছে। অনলাইন জুয়া সেই দুর্বলতাকে পুঁজি করছে। এটি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং সামাজিক ভাঙন ডেকে আনছে। পরিবারে অশান্তি বাড়ছে, অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি নগরীর মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রামের সামাজিক সংগঠনগুলোকে একযোগে এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।”

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, “অনলাইন জুয়ার বিস্তার আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চক্রগুলো সাধারণত বিদেশ থেকে পরিচালিত হলেও স্থানীয় এজেন্টরা নগদ, বিকাশ বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করছে। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি, অনেক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজও করেছি। তবে শুধু আইনের প্রয়োগ যথেষ্ট নয়, পরিবার ও সমাজকে এ বিষয়ে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিউল আলম বলেন, “এটি এক ধরনের ডিজিটাল ড্রাগ। নগরী থেকে গ্রাম, সব জায়গাতেই তরুণেরা মোবাইল হাতে পেলেই এই নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, কর্মজীবন নষ্ট হচ্ছে। এখনই যদি সচেতনতা বৃদ্ধি না করা যায়, তাহলে আগামী দশ বছরে আমাদের সমাজ এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে যাবে।”

শহর ও গ্রাম মিলিয়ে চট্টগ্রামের প্রতিটি জনপদে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তরুণ এ জুয়ার ফাঁদে জড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্থানীয় এজেন্টরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সময় থাকতে প্রতিরোধ না গড়ে তুললে প্রজন্মকে নৈতিক ও অর্থনৈতিক ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে এই ভয়ঙ্কর ডিজিটাল নেশা—এমনটাই আশঙ্কা স্থানীয় সমাজবিদ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝