বঙ্গোপসাগরে ৫৮ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা এখনও চলমান। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ১ জুন থেকে নতুন করে তিন মাসের জন্য সুন্দরবন এলাকায়ও মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ফলে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের উপকূলীয় হাজারো জেলে এখন এক ধরনের মানবিক সংকটে পড়েছেন। সাগরেও যাওয়া যাচ্ছে না, আবার বনভিত্তিক নদী-নালায়ও নামা নিষিদ্ধ। জীবিকা হারিয়ে পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তারা।
জেলেদের অভিযোগ, বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না করে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। সমুদ্রগামী নিবন্ধিত জেলেদের জন্য খাদ্যসহায়তা থাকলেও সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলেরা এখনও সেই সহায়তা থেকে বঞ্চিত। বন বিভাগ তাদের জন্য ৪০ কেজি চাল বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে, যা এখনও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
পাইকগাছার হিতামপুর মালাপোড়ার সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, “সাগরে যাইতে পারতেছি না, আবার সুন্দরবনের নদীতেও নামতে পারি না। কিছু করতেও পারছি না। খুব কষ্টে আছি।” একই গ্রামের আনন্দ বিশ্বাস ও মহাদেব বিশ্বাস বলেন, “আমরা নিষেধাজ্ঞা মেনে নিচ্ছি, কিন্তু স্থানীয় নদী-নালায় তো কিছু মাছ ধরা যেতেই পারে। এখন একদম আয় বন্ধ হয়ে গেছে।”
খুলনা জেলার কয়রার পাথরখালী এলাকার জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা দিন আনি দিন খাই। এখন তিন মাস কাজ ছাড়া বসে থাকতে হবে। সরকার যদি বিকল্প কাজ বা সহায়তা না দেয়, আমরা চলবো কীভাবে?”
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান জানান, “সমুদ্রগামী জেলেদের জন্য চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনভিত্তিক জেলেদের জন্য বন বিভাগ খাদ্য সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে, যা আমরা মৎস্য দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়েছি।”
বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুন্দরবন রক্ষা ও মাছের প্রজনন মৌসুমকে মাথায় রেখে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তারা বলছেন, বনজীবী জেলেদের জন্য খাদ্য সহায়তার আবেদন ইতোমধ্যে পরিবেশ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বেসরকারি সংগঠন অ্যাওসড-এর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরেফিন বলেন, “জেলেরা শুধু অর্থনীতির অংশ নয়, তাদের মাধ্যমে আমিষ সরবরাহ নিশ্চিত হয়। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে উপকূলীয় এলাকায় বিপর্যয় নেমে আসবে।”
খুলনা জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় প্রায় ৪৬ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন, যার মধ্যে সমুদ্রগামী ৩২ হাজার। এ ছাড়া কয়রায় ১৩ হাজার, পাইকগাছায় প্রায় ৫ হাজার, দাকোপে ৩ হাজার এবং ডুমুরিয়ায় আড়াই হাজার জেলে আছে, যারা প্রত্যক্ষভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল।
জেলেদের একটাই দাবি- “জীবন বাঁচাতে সহায়তা চাই।” দুই জায়গায় একযোগে নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে, পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা এখন তাদের জন্য সবচেয়ে বড় লড়াই।
এফপি/রাজ