‘চুরির দায়ে’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আনাস আহমেদকে মারধরের পর শিক্ষার্থীদের হাতে আটক রাব্বি এলাহীসহ তিনজনকে ছেড়ে দিতে সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান এবং কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার টিটুকে ক্যাপ্টেন পলাশ পরিচয়ে একজন ফোন দিয়ে হুমকি দেন। যিনি নিজেকে রাব্বি এলাহীর বন্ধু বলেও পরিচয় দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা শহরের একটি হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আনাস আহমেদ ও তার সহপাঠী শামীম ভুঁইয়া ফটো ও ভিডিওগ্রাফি এজেন্সি ‘নবাব’ এর একটি ক্যামেরার লেন্স চুরি করে নিয়ে আসেন। তাৎক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরায় আনাস এবং শামীমকে সনাক্ত করে হোটেল কর্তৃপক্ষ। এরপর রাত সাড়ে আটটার দিকে রাব্বি এলাহীর নেতৃত্বে ক্যাম্পাস এরিয়ায় ৫-৬টি বাইক নিয়ে কিছু লোকজন নিয়ে আনাসকে একটি দোকানের স্টোর রুমে নিয়ে মারধর করে। মারধর শেষে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ভিডিও করে নেয়। হামলাকারীরা তাকে অপহরণেরও চেষ্টা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মারধরকারী তিনজন যুবককে আটক করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসে। আর বাকীরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আনাসকে অর্ধনগ্ন করে রেকর্ডকৃত স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ফলে প্রক্টর অফিসে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।
এরইমধ্যে রাব্বী এলাহী ক্যাপ্টেন পলাশ নামে একজন ব্যাক্তিকে নিজের বন্ধু পরিচয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান রাহাত এবং কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত অফিসার টিটুকে হুমকি দেন রাব্বি এলাহীসহ বাকীদেরকে ছেড়ে দিতে।
রাব্বী এলাহী বলেন, যখন কুবি শিক্ষার্থী আনাসকে মারধর করা হয় তখন আমি ছিলাম না। ফাহিম নামের একটা ছেলে মারামারির সময় উপস্থিত ছিলো। আমার সাথে কোতোয়ালি থানার আইসি রাকিব এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ম্যাজিক প্যারাডাইসে অবস্থান করেন। উনি পুরো ব্যাপারটাই জানতেন। ক্যাপ্টেন পলাশ আমার বন্ধু। আমি ওরে পুরো ব্যাপারটা জানাই তখন সে প্রক্টর এবং পুলিশের সাথে ফোনে কথা বলে।
এখানে উপস্থিত রাব্বীর বন্ধু বাহার বলেন, মারধরের ঘটনা ঘটেছে। তবে আমরা সেখানে ছিলাম না।
কোতোয়ালি থানার আইসি রাকিব বলেন, আমরা একটা জিডি পেয়েছিলাম লেন্স হারিয়ে যাওয়ার। সন্ধ্যাবেলায় আমার কাছে কল আসে বাদীপক্ষের একজনের। উনি বলেছেন যে উনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে চুরির অভিযুক্ত আনাসকে ধরে ফেলেছেন। উনারা আমাকে না জানিয়ে একা একা চলে যাওয়ায় আমার রাগ হয়। তখন আমি কোটবাড়ি বার্ডের সামনে ছিলাম। এটা শুনার পর আমি সেখান থেকে চলে যাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সহকারী মাহমুদুল হাসান রাহাত বলেন, রাব্বী আমাকে উনার ফোন দিয়ে বলেন ক্যাপ্টেন পলাশের সাথে কথা বলতে। আমাকে ক্যাপ্টেন পলাশ বলেছেন যেহেতু মারধরের মতো একটি ঘটনা ঘটে গেছে তাই ব্যাপারটা যেনো আমি সহজভাবে সমাধান করে দেই।
কোটবাড়ি থানার দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার টিটু বলেন, রাব্বী আমাকে ক্যাপ্টেন পলাশের সাথে কথা বলার জন্য উনার মোবাইল দেন। ক্যাপ্টেন পলাশ আমাকে বলেছেন ব্যাপারটা যেনো সমাধান করে ফেলি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে এপ্রিশিয়েট করছি। শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে এরা কারো গায়ে হাত তোলেনি।
ক্যাপ্টেন পলাশ বলেন, আমার নাম ক্যাপ্টেন শামীম এবং আমি বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে ‘আর্মার্ড কোর্পস সেন্টার এন্ড স্কুলে’ চাকরিরত আছি। আমি সেনা অফিসার পরিচয়ে প্রক্টরের সাথে কথা বলেছি। সে (রাব্বি) আমার কাছের মানুষ বিধায় এইসময়ে আমি কল দিতেই পারি। কাছের মানুষ বিপদে পড়লে কনভে করার দরকার আছে না? আমি কাউকে হুমকি দেইনি।
সদর দক্ষিণ থানার দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা সবকিছু শুনেছি। অপরাধের সত্যতাও পেয়েছি। আইসি রাকিবের ব্যাপারে আমরা ইনভেস্টিগেশন করবো।
এফপি/রাজ