দেশের অর্থনৈতিক লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার অংশে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা। যার ফলে মহাসড়কে প্রায়ই ঘটছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা।
হাইওয়ে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে এসব যান চলাচল করলেও তারা দেখেও না দেখার ভান করছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, মাসিক মাসোহারার বিনিময়ে মহাসড়কে অবাধে ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলতে দিচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ।
এমন অভিযোগ সড়কে যাতায়াতকারী চালক ও সাধারণ যাত্রীদের। নিষেধাজ্ঞাকে রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিনই চলছে মহাসড়কে এসব অবৈধ যান।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গজারিয়ার ১৩ কিলোমিটার অংশে বাউশিয়া পাখির মোড় থেকে জামালদী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত অবাধে চলছে ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা। পুলিশ আটক করলে দিচ্ছে নানান অযুহাত। আবার বলছে কিছু সাংবাদিক ও বিশেষ ব্যক্তিদের নামও। কেউ বলছে রোগী নিয়ে এসেছি, কেউ বলছে সিএনজি পাম্পে গ্যাস নিতে এসেছেন। গাড়িগুলো এমনভাবে চলাচল করছে, দেখলে মনে হয় না গাড়ি গুলোকে বাধা দেওয়ার কেউ রয়েছে। এ সময় হাইওয়ে পুলিশের চেকপোস্টের সামনে দিয়েই ১০ মিনিটে অন্তত ১৫-২০টি সিএনজিসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ যান নির্বিঘ্নে চলতে দেখা যায়। বেশির ভাগ সিএনজি অটোরিকশার কোনো নম্বর প্লেটও নেই।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, সড়কে অটোরিকশার দাপট নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হচ্ছে না কোনও পদক্ষেপ। মানুষের এই ভোগান্তি, দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেতে এবং সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রততম সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আটো চালক বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ জানি। মহাসড়কে কি এমনি এমনি চলা যায়? আপনার মতো অনেক সাংবাদিক ও পুলিশকে ম্যানেজ করেই চলছি। প্রতি মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা দিতে হয় তাদের।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, গোপনে আঁতাত করেই মহাসড়কে নিষিদ্ধ তিন চাকার বাহনগুলো চলাচল করছে। অবাধে নিষিদ্ধ বাহনগুলো চলাচলের ফলে মহাসড়কে প্রায়ই ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। কয়েক দিন আগে ভাটেরচর এলাকায় একটি সিএনজি ইউটার্ন করার সময় যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়ে মুছরে যায় সিএনজিটি। এতে ঘটনার স্থলে একজন নিহত হয়। চালক সহ ৩ জন যাত্রী গুরুতর আহত হয়। তারপরেও পুলিশ এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শওকত হোসেন জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়ার ১৩ কিলোমিটার অংশে সিএনজি, অটোরিকশা চলতে দেওয়া হয় না। মহাসড়কে কেউ যদি আইন অমান্য করে সিএনজিসহ সরকারের নিষিদ্ধ যান চালায় তাহলে সেইসব গাড়ি আটক চালকদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী মামলা ও আর্থিক জরিমানা আদায় করে থাকি। অবৈধ পরিবহন চলাচলে যদি প্রশাসনের কোনো লোক সহযোগিতা করে থাকে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। আমি সদ্য যোগদান করেছি। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়ার অংশে বন্ধ থাকলেও গেল ২০২৪ সালে ৫ আগস্টের পর থেকে অবাধে চলছে এই নিষিদ্ধ যান।
এফপি/রাজ