সমন্বয়ক পরিচয়ে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বোর্ড সভাপতি আব্দুর রহিমের কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় তাকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ের ভেতর লাঞ্চিত করা হয়। ওই ব্যক্তি (আব্দুর রহিম) আওয়ামী লীগের দোসর হওয়ায় তাকে পদ থেকে সরে যেতে বলায় স্বেচ্ছায় তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখার সদস্য সুমন আহমেদ।
তবে সুমনকে আগেই দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে জানিয়ে তার দায়ভার সংগঠন বহন করবে না বলছেন জেলার নেতারা। এদিকে পুরো ঘটনা সমিতির জেনারেল ম্যানেজারের সামনে ঘটলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।
সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে কুষ্টিয়া পল্লী বিদুৎ সমিতির ৫ নং এলাকা পরিচালক নির্বাচিত হন আব্দুর রহিম। পরবর্তীতে তিনি সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও সচিব পদে দায়িত্ব পালন করেন। চলতি বছরের ১ মার্চ আব্দুর রহিম সমিতির বোর্ড সভাপতির পদে শপথ গ্রহণ করেন। ২০২৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তার আগেই সমন্বয়ক নামধারী কিছু লোকজন জোরপূর্বক তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন।
ভুক্তভোগী আব্দুর রহিম জানান, মঙ্গলবার কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বোর্ড সভা ছিল। আমি সেখানে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে সুমন নামে এক যুবক দলবেধে এসে আমাকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বলেন। কারণ জানতে চাইলে আমাকে লাঞ্চিত করেন। এরপর জোরপূর্বক জেনারেল ম্যানেজারের কক্ষের ভেতরেই পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে তারাই জমা দেয়। কি লিখেছে, কি করেছে আমি কিছুই দেখিনি।
আব্দুর রহিম আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর উপায় নেই। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা কোন ঝামেলায় যেতে দিতে চাননি, আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি। এর বিচার আল্লাহর হাতেই ছেড়ে দিলাম।
আব্দুর রহিমের স্বাক্ষরিত পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে আমি বোর্ডের সভাপতি পদে আছি। আমার বিশেষ প্রয়োজনে আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন এলাকা পরিচালক বলেন, এটা একটা অরাজনৈতিক পদ। কারো রাজনৈতিক পদ পদবী থাকলে সে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে না। তারপরও একটি পক্ষ তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। আবার তারা পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছে জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) বরাবর। এটাও অবৈধ প্রক্রিয়া। জিএম মাধ্যম হতে পারেন, কিন্তু পদত্যাগপত্রের আবেদন হবে চেয়ারম্যান বরাবর।
মুঠোফোনে সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী যুবক সুমন আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আব্দুর রহিম আওয়ামী লীগের দোসর। এই শহরে ফ্যাসিবাদের কোন দোসরকে পুর্নবাসন করতে দেওয়া হবে না। আমরা তাকে জোর করিনি। তাকে সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে চলে যেতে বলেছিলাম। তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।
এই বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়ার সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুমন জেলা কমিটির সদস্য ছিল। তার বিতর্কিত কার্যক্রমের জন্য তাকে আগেই সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এখন সে আমাদের কেউ না। তার ব্যক্তিগত অপকর্মের দায়ভার সংগঠন বহন করবে না।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) প্রকৌশলী ইসমাত কামাল বলেন, আব্দুর রহিম নিজেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। জোর করে স্বাক্ষর করে নেওয়ার কোন অভিযোগ পাইনি।
এফপি/এমআই