Dhaka, Friday | 14 March 2025
         
English Edition
   
Epaper | Friday | 14 March 2025 | English
আমাদের ওপর আক্রমণ করবেন না, কাজ করতে দেন: আইজিপি
শুক্রবার শপথ নেবেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি
মেয়ে ধর্ষণের শিকার, মামলার পর বাবা খুন
সাংবাদিকদের বেতন ৩০ হাজারের নিচে হলে পত্রিকা বন্ধ: প্রেস সচিব
শিরোনাম:

ব্রহ্মপুত্রে অভিসপ্ত কচুরিপানা, নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার জলজ সম্পদ

প্রকাশ: সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ৫:০৩ পিএম  (ভিজিটর : ৫২)

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে পূর্ব পশ্চিম মুখী একটি ভাসমান সেতু। সেতুটির উত্তর পাশে সম্পূর্ণ ছেয়ে গেছে কচুরিপানায়। দক্ষিণ পাশে কিছুটা অংশে কচুরিপানা নেই, তারপর আবার কচুরিপানার দখলদারিত্ব। তবে এই ফাঁকা অংশটুকুতেও যেকোন সময় কচুরিপানার বিস্তার ঘটবে বলে অনুমান করা যায়।

স্থানীয় পৌরবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই নদটিতে গত কয়েক দশক দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ প্রজেক্ট আকারে প্রতি বছর কোটি টাকার উপরে মাছ চাষ করেছে। বর্তমানে অযত্ন-অবহেলায় কোটি টাকার জলজ সম্পদ নষ্ট হচ্ছে । নদের কিনারে গত বছর যেখানে ধান চাষ করা হয়েছে, সেখানে এখন কচুরিপানা । ধান চাষের সুযোগ নেই । নদীতে জাল ফেলার সুযোগ নেই। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাসমান সেতুটি ভেঙে যায়। তখন নদে পানি থাকলেও কচুরিপানার কারণে নৌকা চালানো কষ্টকর হয় পরে। ব্রহ্মপুত্রের কচুরিপানাগুলো অপসারণ করা জরুরী। এতে রক্ষা হবে নদের জলধারা ও জলজ বাস্তুসংস্থান, নদটিতে বৃদ্ধি পাবে দেশীয় মাছের প্রজনন।

ইতিহাস স্বাক্ষী, কচুরিপানা বাংলায় এসেছিলো অভিশাপ হয়ে। ফেলেছিলো মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব। বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া ও জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলা পিডিয়ার তথ্য বলছে, কচুরিপানা পচে পানির নিচে বিষাক্ত গ্যাস ছড়ায়। এতে পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। পানির নিচের জলজ উদ্ভিদ মরতে শুরু করে, সেই সাথে প্রচুর মাছ মরে যায়। মানুষের জন্যও এই পানি ব্যবহার করা অনিরাপদ। কচুরিপানা দ্রুত বর্ধনশীল একটি উদ্ভিদ, বাড়তে পারে ১ মিটার পর্যন্ত। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে একটি মাত্র উদ্ভিদ পঞ্চাশ দিনে তিন হাজারের বেশি সংখ্যায় বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। এটি প্রচুর পরিমানে বীজ তৈরি করে। কচুরিপানার বীজ ৩০ বছর পরেও অঙ্কুরোদগম ঘটাতে পারে। রাতারাতি বংশ বিস্তার করে প্রায় ২ সপ্তাহে দ্বিগুন হয়। কচুরিপানা মশার বাসস্থান সৃষ্টি করে। সেই সাথে ম্যালেরিয়া ও কলেরা রোগের সাথে পরোক্ষ ভাবে জড়িত বলেও মন্তব্য করেছেন তৎকালীন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষকগণ।

১৮শ শতকের শেষভাগে জর্জ মরগ্যান নামের এক পাট ব্যাবসায়ী ভারত উপমহাদেশে কচুরিপানা নিয়ে আসেন। উদ্ভিদটি দ্রুত বাড়ার কারনে ১৯২০ সালে বাংলার প্রতিটি নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর- জলাশয়ে ছেয়ে যায়। ১৯৩৬ সালে কচুরিপানা নির্মূল আইন প্রণীত হয়। ১৯৩৭ সালে রাজনৈতিক দলগুলো কচুরিপানা মুক্ত করার অঙ্গিকার দেয়। ১৯৩৯ সালে মেম্বার অব বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ও কলকাতার মেয়র শেরে-ই-বাংলা এ.কে.ফজলুল হক নির্বাচিত হয়ে সে বছর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বাংলায় ‘কচুরিপানা সপ্তাহ’ পালন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার ইকবাল তার ‘ফাইটিং উইথ আ উইড: ওয়াটার হায়াসিন্থ অ্যান্ড দ্য স্টেট ইন কলোনিয়াল বেঙ্গল’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে লিখেছেন, কচুরিপানার এসব নাস্তানাবুদ পরিস্থিতির কারণে তখনকার গণমাধ্যমে কচুরিপানাকে ‘বিউটিফুল ব্লু ডেভিল’ এবং ‘বেঙ্গল টেরর’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২২ সালের জুলাই-আগষ্ট মাসে সাবেক মেয়র শেখ মোহাম্মদ নুরুন্নবী অপু সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা খরচ করে কচুরিপানা অপসারণ করেছিলো। আবারো নদটিতে কচুরিপানা ছেয়ে গেছে। চলতি বছর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কচুরিপানা অপসারণ করার জন্য ৩ লক্ষ টাকা ব্যায়ের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছিলো। কিন্তু পরিচ্ছন্ন শ্রমিকেরা বলেন, ৭-৮ লক্ষ টাকার বাজেট লাগবে। পৌরসভায় পর্যাপ্ত তহবিল না থাকায় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দ্বারা এই মুহুর্তে কচুরিপানা অপসারণ সম্ভব নয় বলেও জানা যায়।

এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা বন বিভাগ কর্মকর্তা মো. রাশেদ ইবনে সিরাজ এঁর সাথে। তিনি বলেন, সূর্য রশ্মির মাধ্যমে নদে যে খাদ্য তৈরি হয়, কচুরিপানার কারনে তা ব্যহত হচ্ছে। পানি ঘোলা থাকছে, দূষিত হচ্ছে। সঠিকভাবে জলজ বাস্তুসংস্থান হচ্ছেনা।

উপজেলা মৎস কর্মকতা মো. শফিউল আলম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদটি মরে উন্মুক্ত জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৫০ একর জায়গা জুড়ে কেবল নদের চিহ্ন রয়েছে। সেখানে কচুরিপানার যে দখলদারিত্ব দেখা যাচ্ছে তাতে দ্রুত অপসারণ করা দরকার। কচুরিপানা দ্রুত বর্ধনশীল একটি উদ্ভিদ। নয়তো ভবিষ্যতে বেগ পোহাতে হবে।

এফপি/এমআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: financialpostbd@gmail.com, tdfpad@gmail.com
🔝