‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। বাংলা এই বাগধারাটা দারুণভাবে মানিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটার জশ ইংলিসের সঙ্গে। জন্ম তার ইংল্যান্ডের লিডসে। আর সেই জন্মভূমির বিপক্ষেই সম্ভবত ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটাই খেললেন গতকাল লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মহারণে তার ইনিংসে ভর করেই নতুন ইতিহাস লিখেছে অস্ট্রেলিয়া।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগমুহূর্তে একের পর এক চোটের হানা ছিল অস্ট্রেলিয়া দলে। ছিটকে পড়েন নিয়মিত অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। চোটের কাছে হার মানতে হয় তারকা পেসার জস হ্যাজলউড ও মিচেল মার্শকেও। মার্কাস স্টয়নিসের আচমকা ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা অস্ট্রেলিয়াকে যেন আরও ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আগে শ্রীলঙ্কার কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা ওয়ানডের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আলোচনার টেবিল থেকেই আড়াল করে দিচ্ছিল অনেকটাই। কিন্তু দলটা যখন অস্ট্রেলিয়া, চ্যাম্পিয়নের মতো ফিরে আসাটা হয়তো তাদের ললাটেই লেখা। তাদের হয়ে এবার ত্রাতা ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া জশ ইংলিস!
শনিবার গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৫১ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা খেলেছিলেন ইংলিশ ব্যাটার বেন ডাকেট। ১৪৩ বলে ১৬৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। ইংল্যান্ডও টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড।
এমন পাহাড়সম টার্গেট তাড়া করে জিততে হলে নতুন ইতিহাসই লিখতে হতো অস্ট্রেলিয়াকে। সেটাও রচনা হলো লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। জস ইংলিসের অবিশ্বাস্য ইনিংসে ভর করে ৪৭ দশমিক ৩ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। ইংলিস এদিন মাত্র ৮৬ বলে ৮ চার ও ৬টি ছয়ে ১২০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে অজিদের জয় এনে দেন।
অস্ট্রেলিয়ার ২৯ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার-ব্যাটারের জন্ম ইংল্যান্ডে। ১৯৯৫ সালে ইয়োর্কশায়ারের লিডসে জন্ম নেওয়ার পর সেখানেই জীবনের প্রথম ১৪ বছর কাটিয়েছেন ইংলিস। এমনকি তার ক্রিকেটের হাতেখড়িও ইয়র্কশায়ার একাডেমিতে। ১৫ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান ইংলিস। অস্ট্রেলিয়ায় ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ও পার্থ স্কচার্সের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা ইংলিসের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ২০২০-২১ শেফিল্ড শিল্ড মৌসুম।
অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে ইংলিসকে। এর মধ্যে বছর কয়েক আগে একবার জানিয়েছিলেনও এখনো ইংল্যান্ডের সমর্থক তিনি। অবশ্য সেই ভাবনা এখন পেছনে ফেলে এসেছেন। গতকাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ডকে সমর্থন করেন কি না—এই প্রশ্নে ইংলিস বলেন, ‘সেই দিনগুলো অনেক আগেই শেষ। তবে আমি এখনো ফুটবলে (ম্যানচেস্টার) সিটিকে সমর্থন করি। আমি এরই মধ্যে ইংল্যান্ড থেকে কয়েকটি বার্তা পেয়েছি, যা বেশ ভালো লেগেছে।’
এফপি/এমআই