আনোয়ার হোসেন (৩৮) নামে এক যুবক দুবাইতে কনস্ট্রাকশনের কাজ করতে গিয়ে মাথার উপরে সরঞ্জাম পড়ে মৃত্যুর ১৯ দিন পর মরদেহ বাড়িতে আসলেও তাঁর বাবা, ভাই সৎ মা মরদেহ রেখে পালিয়ে গিয়েছেন। এবং জানাজা ও দাফন কার্যে অংশ নেননি তারা। এমনি এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে জামালপুরের মাদারগঞ্জে।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার গাবেরগ্রাম চৌরাস্তা মোড় এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। প্রবাসী আনোয়ার হোসেন চৌরাস্তা মোড় এলাকার শাজাহান প্রামানিক ওরফে সাজা বাঘার ছেলে। স্থানীয়রা জানান,‘প্রায় ২ বছর আগে আনোয়ার হোসেন দুবাইয়ে যান।’ সেখানে তিনি কনস্ট্রাকশনের কাজ করতো।
এ মাসের (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ভবন নির্মাণের কাজ করার সময়ে উপর থেকে কনস্ট্রাকশনের সরঞ্জাম আনোয়ার হোসেনের উপরে পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। প্রায় ১৯ দিন পর তার মরদেহ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে নিজ বাড়িতে আনা হয়। আনোয়ার হোসেনের বাবা শাজাহান প্রামানিক দুটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর সন্তান আনোয়ার হোসেন। শাহজাহানের দ্বিতীয় স্ত্রীর তিন সন্তান। শনিবার আনোয়ার হোসেনের মরদেহ বাড়িতে আনা হলে পরদিন রবিবার সকালে আনোয়ার হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানরা বাড়ি থেকে তারা পালিয়ে যান। আনোয়ার হোসেনের ছোট দুইটি সন্তান রয়েছে। তাদের নামে জমি দিতে হবে, এমন প্রতিশ্রুতি দিতে হবে ভয়ে শাজাহান ও তাঁর ছোট ছেলে সাগর বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। বড় ছেলে সবুজ আহমেদ আগে থেকেই বাড়িতে ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত আসেওনি। এমন ঘটনায় হতবাক ও ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী।
গাবেরগ্রাম এলাকার স্থানীয় আশরাফুল নামে একজন বলেন,‘শাজাহান ওরফে সাজা বাঘা নিহত আনোয়ার হোসেনের বাবা।’ আনোয়ার হোসেন ছোট থেকেই খুব কষ্ট করে বড় হয়েছেন। আনোয়ার হোসেনের মাকে প্রথম বিয়ে করে শাজাহান। পরে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর শাজাহানের আরো তিন ছেলে মেয়ে হয়। তাদের নামে জমি লিখে দেন শাহজাহান। আনোয়ার হোসেনের নামে কোন জমি জমা দেননি। আনোয়ার দুবাই মারা গেলে তার মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। শাজাহান ও তাঁর দ্বিতীয় দিকের ছেলের আনোয়ারের জানাজায় অংশগ্রহণ করেনি। তাদের ভয় ছিল আনোয়ারের দুইটা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে রয়েছে। তাদের নামে যদি জমি লিখে দিতে হয় এমন ভয়ে তারা জানা যায় আসেনি। এটি খুবই দুঃখজনক বাবা হয়ে ছেলের জানাজায় আসেনি।
আনোয়ার হোসেনের চাচা জাহিদুল বলেন, ‘আমার বড় ভাই তাঁর দ্বিতীয় দিকের ছেলে মেয়েদের জমি লিখে দিয়েছে অনেক আগেই।’ জানাজায় না আসার কারণ আনোয়ারের দুই ছেলে মেয়ে রয়েছে। তাদের তো কিছুই নেই। জানাজায় লোকজন যদি বলে আনোয়ারের ছেলে মেয়েদের নামে জমি লিখে দিতে হবে। এই ভয়ের কারণেই তারা জানাজায় না এসে পালিয়ে গিয়েছে। পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এদিকে অভিযুক্তদের বক্তব্য জানতে আনোয়ার এর সৎ ভাই সবুজ আহমদে যোগাযোগ করা হলে, জানাজায় উপস্থিত না হওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, আমার বাবা যদি আমার মৃত ভাইয়ের ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীকে জমি লিখে না দেয় তাহলে আমার মামারা সকলে মিলে আমার বাবাকে আক্রমণ করবে। এই আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন মৃত ব্যক্তির লাশকে পুঁজি করে কোন দাবি আদায় করতে না পারে এই কাজের বিরোধিতা করার জন্য অনুপস্থিত ছিলেন।
এফপি/জেএস