বাফুফে ভবন থেকে সংবাদমাধ্যম নিজ নিজ কাজে চলে গেছে। সুনশান নীরবতা, বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা। নারী ফুটবলাররা একে একে সুসজ্জিত হয়ে চার তলা থেকে নেমে আসছেন। একে একে বেরিয়ে যাচ্ছেন ফুটবল ভবনের পেছনের ফটক দিয়ে। যারা সামনের ফটক দিয়ে যাচ্ছেন-আসছেন, সেখানে বিদ্রোহে থাকা ১৮ ফুটবলারের কেউ নেই।
ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ফুটবলাররা পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। পরনে জিন্সপ্যান্ট, গায়ে টি-শার্ট, পিঠে ঝোলানো ব্যাগ, মাথায় ক্যাপ লাগিয়ে, ক্যাডস পায়ে সুন্দর সাজ-সজ্জায় এক জন, দুই জন, তিন জন করে বেরিয়ে গেলেন। কারো মুখে কথা নেই। দ্রুত স্থান ত্যাগ করার মানসিকতা। একজন আরেক জনকে তাড়া দিচ্ছেন, ‘জলদি আয়। দৌড় দে।’
একজন নারী ফুটবলার বললেন, ‘আমরা এখন কারো সঙ্গে কথা বলতে চাই না। একটা বাজে পরিস্থিতি কেটেছে। আমাদের মানসিক অবস্থাটাও ভালো না। কারো সঙ্গে কথা বলতে চাই না।’
খেলোয়াড়রা নিজ নিজ প্রয়োজনে সবাই ক্যাম্প থেকে বাইরে গেছেন। বসন্তের সাজেও ঘুরেছেন। গতকাল একাধিক ফুটবলার বলছিলেন, দম বন্ধ করা পরিবেশ ছিল। ক্যাম্পে কারো মন ভালো ছিল না। একটা ধাক্কা সামাল দিয়ে উঠার খড়কুটো পেয়েছেন নারী ফুটবলাররা। আপাতত স্থবিরতা কিছুটা কাটবে। নারী ফুটবলারদের দাবি তাদের মানসিক পরিস্থিতি ভালো না। টানা ২০ দিন বাজে সময় গেছে।
এ পরিস্থতিতে অন্তত আর যাই হোক ফুটবল খেলা যায় না, সেটা পরিষ্কার করে জানিয়েছেন। তাদের দাবি, আমাদেরকে আরব আমিরাতে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল কিন্তু আমরাই রাজি হইনি। অনুশীলন ছাড়া একজন ফুটবলার কোনোভাবেই খেলতে পারবে না। বিদ্রোহে থাকার দিনগুলো কেমন কীভাবে কেটেছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘শুধুমাত্র জিম করে কাটিয়েছি।’
অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, মাসুরা পারভিন, সানজিদা আক্তার, কৃষ্ণা রানী সরকার, মারিয়া, মনিকারা বাফুফে ভবন ফাঁকা হয়ে গেলে নিচে নামতেন। জিমে প্রবেশ করে জিম করতেন। সেখানেই তারা টিকটক করেছেন। রিল তৈরি করেছেন। একজন ফুটবলারের দাবি পিটার যখন ভোরে জুনিয়র ফুটবলারদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে চলে গেছেন তখনই তারা জিম করতেন। সবাই একসঙ্গে জিম করেননি। যার সময় নিয়ে গ্রুপ বেঁধে জিম করেছেন।
বিদ্রোহ করার কারণে ক্যাম্পে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল কি না, এমন প্রশ্নে অন্য আরেক জন ফুটবলার বলেন, ‘নাহ, না না। খাওয়ায় কোনো সমস্যা নেই। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল।’
বিদ্রোহ থেকে এখনো সরে আসেননি ফুটবলাররা। অনুশীলনে ফেরাটাও নিশ্চিত না। কারণ এখন সবাই ছুটিতে যাবেন। ছুটি শেষে ক্যাম্পে ডাকা হলেও তারা সরাসরি অনুশীলনে যোগ দেবেন না। কোচের সঙ্গে বৈঠক হবে, সমস্যা নিয়ে কথা হবে। সমাধান হলে মাঠে ফিরবেন। না হলে বিকল্প পথ দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
এফপি/এমআই