Dhaka, Tuesday | 25 November 2025
         
English Edition
   
Epaper | Tuesday | 25 November 2025 | English
বিমান চলাচলে বাড়ছে ঝুঁকি
ঢাকায় তাপমাত্রা কেমন থাকবে আজ
ফারাক্কা বাঁধ: উত্তরবঙ্গের জলসংকটের মূল শিকড়
ভূমিকম্প নিয়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি
শিরোনাম:

ঢাবি শিক্ষার্থী সরি টু মি লিখে শেষ বিদায়!

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৪ এএম  (ভিজিটর : ৫)
সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

কুষ্টিয়ার মিরপুরে নিজ ঘর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষার্থী সুমি আক্তারের (২৬) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে সুমি নিজের ফেসবুক আইডিতে সর্বশেষ স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন সরি টু মি। নিজের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তিনি। অসুখের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে সুমি আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি পরিবারের।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) ভোরে উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের নিজ ঘর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রোববার রাতে সুমি তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। নিজের ঘরের বাঁশের আড়ার সঙ্গে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

সুমি আক্তার আমবাড়িয়া গ্রামের কৃষক গোলাপ রহমানের মেয়ে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে চাকরির চেষ্টা করছিলেন। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সুমি বড় সন্তান। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সুমি আক্তার জন্মগতভাবে ফাইব্রাস ডিসপ্লাসিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পূর্ণ করেন। গত দেড় মাস আগে থেকে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়ায় তার নিজ বাড়ি থেকে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রোগের কারণে তার হাড় দ্রুত ক্ষয় হচ্ছিল এবং একাধিক অস্ত্রোপচার সত্ত্বেও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তার শরীরে তীব্র ব্যথা, চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা ও ক্রমাগতদুর্বলতায় তিনি মানসিকভাবে চাপের মধ্যে ছিলেন।

ফাইব্রাস ডিসপ্লাসিয়া রোগের কারণে শরীরে অনেক যন্ত্রণা হওয়ায় সহ্য করতে না পেরে সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নিজের ঘরের বাঁশের আড়ার সঙ্গে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুমির মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল করে। ছোটা চাচা হেলাল উদ্দিন বলেন, সুমি ফাইব্রাস ডিসপ্লাসিয়া নামে একটি রোগে আক্রান্ত ছিল। সে গতরাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত নিজ ঘরে লেখাপড়া করেছে। এরপর রাতে রোগের যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে। ফজরের আজান দিলে সুমির বাবা গোলাম রহমান নামাজের জন্য বের হলে বাবার সঙ্গে দেখা করে আবার ঘরে চলে যায় ঘুমাতে। এরপর সব শেষ।

তিনি আরও বলেন, কিছুদির পরপর সুমিকে ইনজেকশন দিতে হতো। তাতে প্রায় ১৮-২০ হাজার টাকা খরচ হতো। তার পরিবারসহ আমরা এলাকার বিত্তবানরা, সুমির স্যাররা অনেক হেল্প করতেন। এর আগে সুমির ৩ বার সার্জারি করা হয়েছিল। তখন এলাকাবাসীসহ অনেকে তাকে সাহায্য করেছিল। ঢাকার পিজি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। সেখানকার ডাক্তারের সঙ্গে তার হোয়াটসঅ্যাপে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। টেস্টের কাগজ হাসপাতাল থেকে চায়নাতে পাঠানো হয়েছিল বলে সুমি আমাকে জানিয়েছিল। তবে কোনো পজেটিভ কিছু আশা করা যাচ্ছিল না। সুমির অসুখটা বেড়ে গেছিল। গলা, ঘাড় ও পায়ের হাড় ক্ষয় হয়ে যাচ্ছিল। সে যন্ত্রনায় ছটফট করতো। আমরা আসলে অসহায় হয়ে গেছিলাম। চাকরির বিষয়ে সুমির চাচা বলেন, সুমি অনেক ডিপ্রেশনে থাকতো। আসলে পড়াশুনা শেষ করে সুমির অনেক আশা ছিল সে বড় চাকরি করবে। সুমি বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে রিটেনে টিকতো। তবে ভাইবাতে যেয়ে তার শরীরের অবস্থা দেখে আর চাকরি হতো না। সে এসবের মানসিক চিন্তায় ও শারীরিক অসুস্থতায় আরও ভেঙে পড়েছিল। হয়তো সেসব দিক থেকেই সুমি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

সুমির মা চায়না বেগম কান্নারত অবস্থায় বলেন, সুমিকে নামাজের জন্য ঘরে ডাকতে গেলে কোনো সাড়া শব্দ পাই না। পরে আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে ঘরের দরজা ভাঙলে দেখি সে বাঁশের আড়ার সঙ্গে ঝুলছে। আমার মেয়েটা খুব ভালো ছিল। ভালো লেখাপড়া করতো। আমার মেয়ের স্বপ্ন ছিল সে বড় চাকরি করবে। আজ তাকে মাটির ঘরে দিয়ে আসলাম।

আমবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুদ্দিন মুকুল বলেন, সুমি নামের একটি মেধাবী মেয়ে মারা গেছে। সে ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিল। সে আসলে পড়াশুনার জন্য অনেকদিন থেকেই ঢাকাতে থাকতো। একটি রোগে আক্রান্ত ছিল। পরিবারের পক্ষে সেই চিকিৎসা করার সামর্থ্য ছিল না। তবে এলাকাবাসী ও বিত্তবানদের সহযোগিতায় তার চিকিৎসা চলতো। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা সহযোগিতার চেষ্টা করতাম।

মিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মমিনুল ইসলাম বলেন, মেয়েটি বিরল রোগে আক্রান্ত ছিল। সহপাঠী এবং গ্রামের বিভিন্ন মানুষের সহায়তায় তার চিকিৎসা চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ না থাকা ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহটি পরিবারের নিকট হস্তান্তর শেষে দাফন করা হয়েছে।

এফপি/জেএস

সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝