Dhaka, Wednesday | 5 November 2025
         
English Edition
   
Epaper | Wednesday | 5 November 2025 | English
দুপুরের মধ্যে ৬ জেলায় ঝড়ের আভাস
আজ ঢাকার আকাশ থাকবে মেঘলা
ডেঙ্গু কেড়ে নিল আরো ৪ প্রাণ
এই নির্বাচন আমার শেষ নির্বাচন: মির্জা ফখরুল
শিরোনাম:

চট্টগ্রামে অনিয়মের রাজত্ব: পার্কিং ছাড়াই গড়ে উঠেছে হাসপাতাল

প্রকাশ: বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৮ এএম  (ভিজিটর : ৩৭)

চট্টগ্রামের প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে অপর্যাপ্ত পার্কিং ও রাস্তা দখলে রোগী, স্বজন ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম নগরের প্রায় সব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে যানজট ও জনজট। অবৈধ পার্কিং, অবৈধ দোকানপাট ও অন্যান্য অনিয়মের কারণে রোগী, স্বজন ও সাধারণ পথচারীদের ভোগান্তির শেষ নেই। অনেক হাসপাতাল নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা না রেখে সরাসরি সামনের রাস্তা দখল করে রেখেছে, যার ফলে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, জরুরি সেবায় ঘটছে বিলম্ব।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো পার্কিং সুবিধা না থাকায় এম্বুলেন্স, প্রাইভেট কারসহ চিকিৎসক ও রোগীদের যানবাহন রাস্তায় দাঁড় করানো হয়। এর ফলে চমেক হাসপাতালের পূর্ব গেট থেকে প্রবর্তক মোড় হয়ে পশ্চিম গেট পর্যন্ত প্রায়ই তীব্র যানজট দেখা দেয়।

এই এলাকায় এপিক হেলথ কেয়ার ও পিপলস্ হাসপাতাল-এর পার্কিং ব্যবস্থা থাকলেও তা অপর্যাপ্ত, আর চিটাগাং ইউরোলজি সেন্টার, কেয়ার ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হোলি হেলথ হাসপাতাল অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চিটাগাং পলি ক্লিনিক প্রা. লি. এবং ডাক্টরস ল্যাব-এর কোনো পার্কিং সুবিধা নেই। এর ফলে রোগী, স্বজন ও অ্যাম্বুলেন্সদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষ ও জরুরি সেবায় মারাত্মক সমস্যা তৈরি করছে।

একই অবস্থা গোলপাহাড় মোড়েও। মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ একাধিক পার্কিংবিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও প্রাইভেট কার বাধ্য হয়ে সড়কে অবস্থান করে।

এছাড়া সিএসসিআর, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ও রয়েল হাসপাতালেও পর্যাপ্ত পার্কিং নেই। ফলে ওআর নিজাম রোড প্রায় সময় একমুখী করে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয় ট্রাফিক বিভাগকে। তারপরও জিইসি থেকে গোলপাহাড় মোড় পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে।

ন্যাশনাল হাসপাতালের কারণে মেহেদীবাগ সড়ক দিয়ে স্বাভাবিক চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। শেভরন হাসপাতাল চালুর পর থেকে মক্কী মসজিদের সামনে থেকে শুরু হওয়া যানজট এখন বিস্তৃত হয়ে পড়েছে পাঁচলাইশ মোড় থেকে প্রবর্তক মোড় পর্যন্ত।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, প্রাইভেট হাসপাতালগুলো সরাসরি ঢাকা থেকে অনুমোদন নেয়। অনুমতি দেওয়ার সময় পার্কিংয়ের বিষয়টি জানানো হয়। সম্প্রতি মেহেদীবাগে নতুন কিছু ক্লিনিক খোলার আবেদনও আমরা নাকচ করেছি। হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে, এবং যদি সমাধান না হয়, তবে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানার আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, সমস্যার দায় স্থানীয় প্রশাসনের ওপর না দিয়ে অনুমোদন দাতা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা উচিত।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মোহাম্মদ লিয়াকত আলী খান জানিয়েছেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রাইভেট হাসপাতাল মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত মিটিং করে আসছি, যাতে হাসপাতালগুলোতে পার্কিংয়ের অভাব ও রাস্তায় গাড়ি রাখার কারণে সৃষ্ট যানজটের সমস্যার সমাধান করা যায়। কিন্তু অনুমোদন দেওয়ার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রায়ই দায়ভার পুলিশকে চাপানোর চেষ্টা করছে। তাই শুধু পুলিশের তৎপরতা যথেষ্ট নয়। প্রত্যেক হাসপাতাল ও ক্লিনিককে নিজেদের পার্কিং ও যান চলাচল নিরাপদ করার দায়িত্ব নিতে হবে। সম্মিলিত উদ্যোগই সমস্যার স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে পারে।”

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা রোগীর স্বজন আবুল কাসেম বলেন, হাসপাতালের সামনে রাস্তায় একটু জায়গা খালি থাকে না। রোগী নিয়ে আসতে গেলে গাড়ি নিয়ে ভীষণ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কখনও কখনও অ্যাম্বুলেন্সও ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকে। জরুরি রোগী নিয়ে আসার সময় এই যানজট মারাত্মক সমস্যা তৈরি করে।

স্থানীয় দোকানদার সালেহ আহমেদ জানান,প্রতিদিনই এখানকার সড়কে একই অবস্থা। হাসপাতালের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট কার—সব রাস্তার ওপর দাঁড় করানো থাকে। পুলিশ এসে মাঝে মাঝে একটু সরায়, তারপর আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। দীর্ঘমেয়াদী কোনো সমাধান হচ্ছে না।

রিকশাচালক মোহাম্মদ রাসেল বলেন,প্রতিদিনই মেডিকেল রোড দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। প্রায়ই রোগী বা স্বজনদের নিয়ে যেতে হয়, কিন্তু একদিনও জ্যাম ছাড়া কাউকে পৌঁছে দিতে পারিনি।

এদিকে যানজট নিরসনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সড়ক দখলমুক্ত রাখতে নিয়মিত অভিযান চালানোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয়রা মনে করছেন, হাসপাতালের পার্কিং সুবিধা বাধ্যতামূলক করা ও ট্রাফিক বিভাগ ও সিটি করপোরেশনের যৌথ তদারকি বাড়ানো গেলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। অন্যথায় এই এলাকা স্থায়ী যানজটের অঞ্চলে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নগরবাসী বলছেন, হাসপাতালগুলোর অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।

এফপি/অ

সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝