রাজশাহীর তানোরের সর্ববৃহৎ ও একমাত্র পশুহাট মুন্ডুমালা পৌরসভার মুন্ডুমালা পশুহাট। এ হাট থেকে প্রতিবছর রাজস্ব আসে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। কিন্তু নেই হাটের কোনো উন্নয়ন। হাটে ময়লা ফেলার কোনো নিদৃষ্ট জায়গা না থাকায়, পশুহাটে ময়লার ভাগাড় করা হয়েছে। সেখানে ব্যবসায়ীরা হাটের ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। এতে এসব ময়লা থেকে প্রচন্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নাক-মুখে কাপড় দিয়েও প্রচন্ড দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না।
গত সোমবার ২১ জুলাই সরেজমিন মুন্ডুমালা পশুহাটে দেখা যায়, পশুহাটের পশ্চিম অংশে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। বাঁকি অংশে বসেছে গরু-ছাগলের হাট। এখানে সপ্তাহের প্রতি সোমবার সকালে ছাগল-ভেড়া ও দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে গরু-মহিষ কেনাবেচা। প্রতি সোমবার এই পশুহাটে দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যাপারীরা আসেন এই হাটে। কিন্তু হাটের একাংশে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনা ও জবাই করা গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়ার বর্জ্য। এতে ছড়াচ্ছে প্রচন্ড দুর্গন্ধ। এদিকে অসহ্য দুর্গন্ধের মধ্যেই চলছে পশু বেচাকেনা। এতে অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে বলে জানান অনেক ব্যাপারী।
মুন্ডুমালা পশুহাটে আশা ক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি গোদাগাড়ী থেকে এই হাটে একটি গরু কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, গরু হাটে ময়লা-আবর্জনা থাকায় যে অসহ্য দুর্গন্ধ তাতে হাটে থাকায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে গরু কিনবেন কিভাবে। হাটে আশা গরু বিক্রেতা যোগিশো গ্রামের বাসিন্দা রিপন আলী বলেন, ভাই দুপুরে আসছি গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি তবে মনে হয় বেশিক্ষণ হাটে থাকতে পারবো না। কারণ যে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে খুবই সমস্যা হচ্ছে। ছাগল কিনতে আশা কৃষ্ণপুর গ্রামের হারুন বলেন, একটা ছাগল কিনেছি তবে এই পশুর হাটের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ একেতো কাঁদা-পানি তার উপরে পাগল করা দুর্গন্ধ।
স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ি বলেন, এবিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি নাই। হাটের যেখানে সেখানে পশু জবাই করা হয়। কিন্তু কসাইয়েরা বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে গর্ত করে মাটিচাপা দেয় না। এসব বর্জ্য ফেলে পশু হাটের ভাগাড়ে, এ কারণে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। হাটের দিন ছাড়াও অন্যান্য দিনে দুর্গন্ধের মাঝে থাকতে হয়। অনেক সময় দুর্গন্ধের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তে হচ্ছে আমাদের।
জানা গেছে, প্রতি বছর এই পশু হাট থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা পৌরসভার রাজস্ব আয় হয়। কিন্তু কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও দীর্ঘদিন থেকে এই ভাগাড় সমস্যার সমাধান না হওয়ায় হতাশ নাগরিকগণ। ভাগাড়ের কারণে শুধু হাটে আশা ক্রেতা-বিক্রেতা নয় হাট সংলগ্ন আশপাশের বাড়ি-ঘরের মানুষেরাও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এবিষয়ে মুন্ডুমালা হাটের ইজারাদার শরীফ উদ্দিন মুন্সী বলেন, মুন্ডুমালা পৌর প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হয়েছে তিনি পৌরসভার কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন তবে পৌরসভার কর্মকর্তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে না।
এ বিষয়ে মুন্ডুমালা হাটের অপর ইজারাদার ফিরজ কবির বলেন, ইউএনও মহোদয় বলার পরেও মুন্ডুমালা পৌরসভার কিছু কর্মকর্তার গোড়িমশির কারণে এই ময়লা-আবর্জনাগুলো অপসারণ হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে পশু হাটের যে অবস্থা তা বলার ভাষা নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা তো দূরের কথা দুর্গন্ধের কারণে আমরাই হাটে ঠিকমতো থাকতে পারি না।
এ বিষয়ে মুন্ডুমালা পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত সালমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বাজারে ময়লা-আবর্জনা থাকার কথা না। আমি পৌরসভার কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করার জন্য, তবে তারা যদি পরিষ্কার না করে থাকে। তাহলে খুব দ্রুত অপসারণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এফপি/রাজ