যশোরের কেশবপুর উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া হরিহর নদী যেন আজ প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে জমে থাকা কচুরিপানা শুধু পানির প্রবাহই বন্ধ করছে না, বরং শঙ্কা জাগাচ্ছে ভয়াবহ বন্যার। সেই শঙ্কার মুখে দাঁড়িয়েই স্থানীয় তরুণদের হাতে শুরু হয়েছে এক মধুর, প্রেরণামূলক উদ্যোগ স্বেচ্ছাশ্রমে নদী পরিষ্কারের অভিযান।
বছরের পর বছর নদী খননের নামে চলে দুর্নীতির মহোৎসব। কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ হলেও বাস্তবে নদী তার স্বাভাবিক গতিপথ ফিরে পায়নি। বরং আজও কচুরিপানা আর পলিতে ভারাক্রান্ত হরিহর নদী।
এই নদী হয়ে পানি প্রবাহিত হয় মনিরামপুর থেকে আসা মধ্যকুল, হাবাসপোল, ভোগতী, বালিয়াডাঙ্গা, রামচন্দ্রপুর, ব্যাসডাঙ্গা, রাজনগর, বারাকপুরসহ বিশাধিক গ্রামের। ফলে পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হলে মুহূর্তেই ডুবে যায় ফসলের মাঠ, জনবসতি আর পৌর শহরের চারণি বাজার এলাকা।
এই বাস্তব সংকট থেকেই রোববার সকালে কেশবপুরে হরিহর নদীতে শুরু হয় কচুরিপানা পরিষ্কারের স্বেচ্ছাশ্রম কার্যক্রম। উদ্যোগে নেতৃত্ব দেন ‘বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের’ মিরাজ বিশ্বাস, ‘হৃদয় ব্লাড ব্যাংক’-এর বাবু বিশ্বাস, ‘প্রিয় কেশবপুর’ গ্রুপের এনামুল হক, সঙ্গে ছিলেন আশরাফুল, নয়ন, আলীম, ইকরামুল, সারাফাত, মোহাম্মদ, সাদসহ আরও অনেকে। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সাংবাদিক ও ‘বর্ণমালা একাত্তর’-এর পরিচালক শফিকুল ইসলাম সুইট। সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম বলেন,‘রাজনীতির দুর্নীতির বাইরে থেকে সাধারণ মানুষ যখন নিজ হাতে নদী পরিষ্কার করতে নামে, তখন সেটা শুধু পরিচ্ছন্নতা নয়, এটা প্রতিরোধ আত্মরক্ষার এক নীরব বিপ্লব’।
এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ কেবল একটি স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম নয়, এটি হয়ে উঠছে একটি স্মরণীয় দিন যেখানে প্রশাসনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও তরুণরা একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নদী রক্ষায় উদ্যোগী। কেশবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা খাতুন বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবীরা যে মানবিক দায়িত্ববোধ নিয়ে এই কাজটি করছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে। প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রস্তুত।”
নদী ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশবিদ প্রকৌশলী এনামুল কবির বলেন, ‘একটি নদীর স্বাভাবিক জীবন চক্র ধ্বংস হলে, তার ফল ভোগ করে আশপাশের শত শত মানুষ। কচুরিপানা নদীর প্রবাহে বাধা হয়ে দাঁড়ালে বর্ষার পানির চাপ সহ্য করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সরকারিভাবে নিয়মিত খনন ও পরিচর্যার অভাবে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। স্বেচ্ছাসেবীদের এই উদাহরণ আমাদের শিখিয়ে দেয়- সচেতন নাগরিকরাই পারে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে’।
এফপি/রাজ