শিশুশিক্ষার হাতে খড়ির প্রচলন হিসেবে একটা সময় ছিলো তালপাতার প্রচলন। আর লেখনী হিসেবে বাঁশের কঞ্চি এবং কয়লার কালি। এই সনাতনী প্রথায় আগেরকার শিশুরা অক্ষরজ্ঞান নিতো। আধুনিকতার ছোঁয়ার সাথে-সাথে এখনকার শিশুদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে অক্ষরজ্ঞান দিলেও তাল পাতার প্রচলন গ্রাম-গঞ্জের অনেক স্থানে এখও দেখা মেলে।
তারই ধারাবাহিকতায় বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ডুমুরিয়া দক্ষিণ পাড়া গ্রামে তাল পাতার প্রচলনে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে যিনি শিশু শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের বাতিঘর হিসেবে আলোকিত করে আসছেন তিনি কালিপদ বিশ্বাস। কালিপদ স্থানীয় মৃত: যুধিষ্টি বিশ্বাসের ছেলে। তিনি এলাকার পন্ডিত মহাশয় নামে খ্যাত।
রোববার (৬ জুলাই) বেলা ১২টায় তার পাঠশালায় শিশুদের অ,আ, ক,খ ; কলরবের মধ্যেদিয়ে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। প্রথমেই তিনি বলেন এই পাঠশালার নাম ‘ডুমুরিয়া দক্ষিণ পাড়া শিশুবিদ্যা নিকেতন’। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে তিনি এই পেশায় নিয়োজিত আছেন। বর্তমান তার বয়স চলে ৮২ বছর। এক প্রশ্নের উত্তরে কালিপদ বলেন, শিশুদের শিক্ষা দিতে তার ভালো লাগে। ভালো লাগার কারনেই এদের হাতে তালপাতা ধরিয়ে দিয়েছি ; যাতে করে এরা দুটি অক্ষর শেখে।
বিনিময় আপনি কোন পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন কিনা? এই প্রশ্নে তিনি বলেন ৫০ জন শিক্ষার্থী আছে ; হাজিরায় ৩১-৩২ জন থাকে। ওদের অভিভাবকরা যা কিছু দেয় তাই নেই। বার্ধক্য আসছে একটু ওষুধ কিনতে হয়। একটা মাছের ঘের আছে, ৫টা ছেলে মেয়ে, মোটা-মুটি চলে যায়।
তিনি জানান, শিশুদের অক্ষর জ্ঞানের প্রথম ধাপ হচ্ছে ; অ,আ,ক,খ, এ,বি, সি,ডি, শতকিয়া ও বানান, ফলা। তাল পাতায় হাতের লেখা ভালো হয়। আমরা এবং আমাদের বাবা-ঠাকুরদাতো ছোটকালে তাল পাতায় লিখছেন আমিও সে প্রথা ধরে রাখছি।
শিশু শিক্ষার্থী বাধন রায় এর মা বলেন, তাল পাতায় হাতের খেলা গুনে-মানে ভালো হয় এবং পরিস্কার অক্ষর হয় ।
অপর শিক্ষার্থীর মা জানান, এখানে প্রতিজন শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন ১২টা করে তালপাতা লিখে দেখাতে হয়। বছর শেষে এরা পরীক্ষা দিয়ে শিশু ওয়ানে ওঠে। ধৈয্য-সহনশীলতা এবং শিশুদের প্রতি মমত্ববোধ পন্ডিত মহাশয়ের বেলায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
এফপি/রাজ