জ্যৈষ্ঠের শুরুতে রংপুরের ছোট বড় বাজার ছেয়ে গেছে রসালো মৌসুমী ফলে। আম, কাঁঠাল, লিচু, তালশাঁস, আনারস, জামরুল, লটকনসহ নানান ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
এই ফলে ভরপুর হয়ে উঠেছে বাজার। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও সব শ্রেণি পেশার মানুষই এই সময় ফলের স্বাদ নিচ্ছেন। চারদিকে এখন রসালো ফলের মৌ মৌ গন্ধ। বেচাকেনাও চলছে হরদম। নানান ফলের পসরা উপেক্ষা করতে পারছেন না কেউই। বিক্রেতারা বেশি দাম হাঁকলেও সাধ্য অনুসারে সবাই ফল কিনছেন।
ক্রেতারা জানান, এই জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রচুর ফল বাজারে এসেছে। কিন্তু বিক্রেতারা দাম ছাড়তে চাচ্ছেন না। বিক্রেতাদের দাবি, আড়ৎ থেকে বেশি দামে ফল কিনতে হচ্ছে। তাই ফলের দাম একটু বেশি এই খুচরা বাজারে।
গতকাল রংপুরের সিটি বাজার, টাউন হল চত্বর, টার্মিনাল, লালবাগ, স্টেশন বাজারসহ বিভিন্ন বাজার এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই রংপুরের বিভিন্ন বাজার ভরে উঠেছে মৌসুমি ফলে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তালের শাঁস জামরুল, লটকনসহ বিভিন্ন ফলের গন্ধে মুখর রংপুরের আড়ত ও বাজারগুলো। ক্রেতাদের সমাগমে ব্যস্ত সময় কাটছে ফল বিক্রেতাদের। কেউ বসে আছেন লিচু নিয়ে, কারও সামনে কাঁঠালের স্তূপ, কেউবা আম-আনারসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বিক্রেতারা জানান, বাজারে উঠতে শুরু করেছে মৌসুমি ফল।
আগামী- এক থেকে দেড় মাস বাজারে এসব ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকবে। বেচাকেনাও হবে জমজমাট। বাজারে বিক্রি হচ্ছে রংপুরের সেরা হাড়িভাঙা,সাদা আম, হিমসাগর (শেষ পর্যায়ে), গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ ও ল্যাংড়া জাতের আম।
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে বাজারে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে আম ও লিচু। রংপুরের বিভিন্ন এলাকা হতে আসা হাড়িভাঙা, হীমসাগর (শেষ পর্যায়ে), সাদা আম, গোপাল ভোগ, ল্যাংড়া আমসহ বাহারি নামের আম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকায়। আর লিচু শত পিচ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৭৫০ টাকা। প্রতিকেজি কালোজাম বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, লটকন ১৪০-১৬০ টাকা। প্রতি পিচ তাল ৩০ টাকা, আনারস ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য ফলের মধ্যে ডালিম ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আঙুর ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা, মাল্টা ২০০ থেকে ২৩০ টাকায় ও আপেল ২২০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
লালবাগের ফল বিক্রেতা নুরুল হক বলেন, সারাদেশ থেকে আম আসছে। আমের দাম কম। সব ধরনের আমের বিক্রি ভালো। এখন সাতক্ষীরার আম আসছে বেশি। এছাড়াও লিচুর চাহিদা অনেক বেশী, বাকী ফল তো আছেই।
আর এক ফল বিক্রেতা ইয়াকুব আলী বলেন, রংপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আম আসছে। আমের দাম তুলনামূলক কম। সব ধরনের আমের বিক্রিই ভালো।
সোহেল নামের আরেক ফল বিক্রেতা বলেন, বাজারে যে লিচুগুলো আসছে সেগুলো আকারে ছোট ও বড়। দাম এখনও কিছুটা বেশী হলেও দাম কিছুটা কমবে। পাকা কাঁঠালের একটা বড় অংশ আসে গাজীপুর ও সাভার থেকে। আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহ পর বাজারে পাকা কাঁঠালের সরবরাহ বাড়বে।
রংপুর নগরীর প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লা ও ফুটপাতে ভ্যানে করেও মৌসুমি এসব ফল বিক্রি করছেন ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। টাউন হলের সামনে টিটু নামে একজনের সঙ্গে ফলের দোকানে দেখা হলে তিনি বলেন, পরিবারের ছোট মেয়ের লিচুর আবদার নিয়মিত, তাই বেশি করে লিচু কিনেছি। আর আমার ব্যক্তিগত পছন্দ হাড়িভাঙা আম সেটাও কিনেছি।
লোপা বেগম নামের একজন গৃহিনী বলেন, আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবার সাধ্যের মধ্যে সব কিছু ক্রয় করতে হয়। তাই ছেলে-মেয়েদের জন্য কিছু আম ও লিচু কিনেছি। তবে বাজারে ব্যাপক ফল থাকলেও তুলনা মূলকভাবে দাম বেশি। ফলের এই মৌসুমে অন্তত দাম আরো একটু কম হওয়া দরকার।
এদিকে বাজারের পাশাপাশি নগরীর প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লা ও ফুটপাতে ভ্যানে করেও মৌসুমি এসব ফল বিক্রি করছেন ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। তবে অনেকে নিজের গাছের ফল বিক্রি করছেন ভ্যানে করে। বাজারের চেয়ে এসব ভ্যানে ফলের দাম তুলনামূলক কম।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভ্যানে বিক্রি করলে দোকান ভাড়া দিতে হয় না, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খরচও নেই। তাই কিছুটা কম দামে বিক্রি করা যায়।
এফপি/রাজ