বাংলাদেশে কোরবানির পশুর সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বেশি হলেও, বাজারে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে এবং কোরবানির সংখ্যা কমেছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি, যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ২১ লাখ বেশি। তবে বাজারে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে; ২০১৮ সালে প্রতি কেজি গরুর মাংসের গড় খুচরা দাম ছিল ৪৩০ টাকা, যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৭২৪ টাকা।
২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গড়ে বছরে ৫৪ লাখের কিছু বেশি গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছে। তবে ২০২২ থেকে ২০২৪ সালে গড়ে ৪৭ লাখ ৩৩ হাজার গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছে, যা আগের তুলনায় গড়ে ১৪ শতাংশ কম। সার্বিকভাবে কোরবানির সংখ্যা ২০১৮-২০২০ সালে গড়ে ১ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ছিল, যা ২০২২-২০২৪ সালে গড়ে ১ কোটি ১ লাখ ৩৫ হাজারে নেমে এসেছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতি এবং আয়বৈষম্যের কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্তের অনেকেই কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন। গরু-ছাগলের দাম বেড়েছে, পাশাপাশি জীবনের অন্যান্য খরচও বেড়েছে। ফলে অনেকেই ভাগে গরু কোরবানি দিচ্ছেন বা ছাগল কোরবানি করছেন, যা তুলনামূলকভাবে কম খরচের।
সরকারি সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যানের মধ্যে ফারাক রয়েছে। যেমন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মতে দেশে আম উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৪৩ হাজার টন, যেখানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে উৎপাদন হয়েছে ২৫ লাখ টনের বেশি। এ ধরনের ফারাক পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে গরু রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এর আগে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গড়ে ২০ থেকে ২২ লাখ গরু-ছাগল বৈধ-অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসত। এই আমদানি বন্ধের ফলে দেশে গরুর মাংসের ঘাটতি তৈরি হয়, যা এখনো পূরণ হয়নি।
গোখাদ্যের দাম বেড়েছে, চারণভূমি কমে গেছে, এবং সরকারের পর্যাপ্ত সহযোগিতা না থাকায় খামারিরা সংকটে পড়েছেন। ব্রাহমা জাতের গরু মাংস বেশি দেয়, তবে এই জাতের সম্প্রসারণ হয়নি। ফলে উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব হয়নি, যা মাংসের দাম বাড়ার একটি কারণ।
সরবরাহ বেশি হলেও কোরবানির পশুর দাম বেড়েছে এবং কোরবানির সংখ্যা কমেছে। মূল্যস্ফীতি, আয়বৈষম্য, এবং পরিসংখ্যানের অসঙ্গতি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। সরকারি নীতিমালা ও পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং খামারিদের সহায়তা প্রদান এই সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এফপি/রাজ