বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছেন। এই রায়ে ২০১৩ সালে হাইকোর্টের দেওয়া নিবন্ধন বাতিলের রায় বাতিল করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই রায় প্রদান করেন। আদালত নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে দলটির প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ বরাদ্দের বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি আদালত; এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব ইসির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
২০০৯ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
জামায়াতে ইসলামী হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। তবে ২০২৩ সালের নভেম্বরে মূল আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগ ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ হিসেবে আপিল খারিজ করে দেয়। পরে দলটি আপিল পুনরুজ্জীবনের আবেদন করলে, ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করে। এরপর শুনানি শেষে ২০২৫ সালের ১ জুন চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাকালীন প্রতীক ছিল ‘দাঁড়িপাল্লা’। তবে ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ‘দাঁড়িপাল্লা’ শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহার হবে এবং কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী এটি ব্যবহার করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের প্রতীক বাতিল করে।
বর্তমানে, আপিল বিভাগ প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে কোনো আদেশ না দিয়ে নির্বাচন কমিশনের ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন।
২০২৪ সালের ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে সরকার পতনের পর ২৮ আগস্ট সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহাল রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহাল তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমে নতুন গতি আনবে। তবে প্রতীক বরাদ্দসহ অন্যান্য বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।
এফপি/রাজ