সোনালি রঙ ছড়িয়ে দিচ্ছে সোনালু ফুল। দেখতে কিশোরীর কানের দুলের মতো মৃদু বাতাসে দুলছে। বর্তমানে এই ফুলটি বিলুপ্তির পথে এক সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর সড়কের পাশে ও বন বাদাড়ে এই সোনালী ফুলটি দেখা মিললে ও তা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। কানের দুলের মত হলুদের আভা মাতোয়ারা করে রাখছে চারপাশ। সবুজ কচি পাতার ফাঁকে ঝলমলে ফুল প্রকৃতিকে যেন সাজিয়ে তুলেছে নিজের মত করে।
বাঞ্ছারামপুরে এই ফুল সোনালু ফুল নামে বেশ পরিচিত। সোনালুকে অনেকে আঞ্চলিক ভাষায় বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি নামেও ডাকে। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ক্যাশিয়া ফিস্টুলা। ইংরেজি নাম গোল্ডেন শাওয়ার। সোনালী রঙের ফুলের বাহার থেকেই 'সোনালু' নামে নামকরণ করা হয়েছে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ ফুলের নাম দিয়েছিলেন অমলতাস। হিন্দিতেও এর নাম অমলতাস। এ ফুলের আদি নিবাস হিমালয় অঞ্চল ধরা হলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার অঞ্চলজুড়ে রয়েছে এর বিস্তৃতি। অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ডের উষ্ণ অঞ্চলে এদের প্রচুর দেখা মেলে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সব উপজেলাতেই সোনালু গাছটি একসময় অনেকের চোখে পরতো কিন্তু কালের বিবর্তনে গাছটি এখন আর কেউ রোপন করেনা দেখে বিলুপ্তপ্রায়। তবে বন বাদারে এই বৃক্ষটি তার ফলের বীজ থেকেই প্রাকৃতিক নিয়মে ঝোপ জঙ্গল পথে প্রান্তরে জন্মে উঠে। নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে এই বৃক্ষটি এখন বিলুপ্তর পথে।
বাঞ্ছারামপুর পৌরসভার দশদোনা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিতরে এই সোনালু ফুলের দেখা মিলছে। গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে যেসব ফুল ফোটে তার মধ্যে সোনালু অন্যতম। তীব্র খরতাপে পথের পথিকের দৃষ্টি কাড়ছে এই ফুল। অনেকেই দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করেছন। অনেকেই আবার বিমোহিত হয়ে গাছ থেকে ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছেন ফুল। সোনালুর রূপ দেখে মনে হয় কোনো রূপসী কন্যা এইমাত্র হলুদের পিঁড়িতে বসেছেন। পুরো গাছ থেকে হলুদ যেন বাতাসে মিশে উড়ে যাচ্ছে। শীতে সমস্ত পাতা ঝরে গিয়ে সোনালু গাছ থাকে পত্রশূন্য এবং বসন্তের শেষে ফুল কলি ধরার আগে গাছে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মকালে যখন সব গাছে একসাথে সোনালী ফুল ফোটে, তখন মনে হয় চারপাশ আলোকিত হয়ে যায়।
সোনালু গাছ আকারে ছোট হলেও ডালপালা ছড়ানো-ছিটানো। দীর্ঘ মঞ্জুরিদণ্ডে ঝুলে থাকা ফুলগুলোর পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। সবুজ রঙের একমাত্র গর্ভকেশরটি কাস্তের মতো বাঁকানো। এ গাছের ফল বেশ লম্বা, লাঠির মতো। দশদোনা স্কুলের সহকারী শিক্ষক দ্বীন মোহাম্মদ দিপু বলেন, প্রতিদিনই স্কুলে এসে সোনালু ফুলের হলুদ সৌন্দর্য উপভোগ করছি। মন আর প্রাণ যেন জুড়িয়ে যায় এর সৌন্দর্যে।
দশদোনা গ্রামের মো: নাছিম আহমেদ বলেন, আমাদের স্কুলের ভিতরে সোনালু ফুলের গাছ রয়েছে। প্রতিদিন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তা দেখে আনন্দ পায় আবার অনেকে গাছের পাশে দাড়িয়ে সেলফি তুলে। যখন এ ফুল হলুদ আভা ছড়ায়, তখন ছাত্রছাত্রীদের এ দৃশ্য মনপ্রাণ কেড়ে নেয়, প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে।
এফপি/রাজ