হঠাৎই ছুটিতে গেলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। তার এই ছুটিতে যাওয়া নিয়ে ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় চলছে নানা ধরনের গুঞ্জন। অনেকেই বলছেন তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে গিয়েছেন। অনেকেই বলছেন, দুই সপ্তাহের জন্যে তার ছুটি। তবে ইতোমধ্যেই তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন।
রোববার (১১ মে) সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে তিনি ঢাকা বিমানবন্দর থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮৭ ফ্লাইটে দুবাই হয়ে পাকিস্তানের ইসলামাবাদের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। সেদিনই পাকিস্তান হাইকমিশন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সৈয়দ মারুফের ঢাকায় অনুপস্থিতির বিষয়টি জানায়। মঙ্গলবার (১৩ মে) সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৯ মে তিনি কক্সবাজার সফরকালে তাকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জরুরি তলব করে।
সাধারণত একজন রাষ্ট্রদূত কোনো দেশে দায়িত্ব পালনের সময় ছুটিতে গেলে স্বাগতিক দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়। রাষ্ট্রদূত কত দিন ছুটিতে থাকবেন, তার অনুপস্থিতিতে কে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করবেন, সেটিও আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, সৈয়দ মারুফ ১১ মে থেকে ছুটিতে থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি বাংলাদেশের বাইরে থাকার সময়টাতে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের উপহাইকমিশনার মুহাম্মদ আসিফ। তখন পাকিস্তান হাইকমিশনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সৈয়দ মারুফ কত দিন ছুটিতে থাকবেন, তা কিন্তু উল্লেখ করা হয়নি। এরপর পাকিস্তান হাইকমিশন অনানুষ্ঠানিকভাবে জানায়, দুই সপ্তাহের ছুটিতে থাকবেন সৈয়দ মারুফ।
অথচ বাংলাদেশের রাজনীতির এমন ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতি এবং দীর্ঘদিন পর পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারের মতো এমন উর্বর সময়ে আহমেদ মারুফ দেশ ত্যাগ কেন করলেন তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। গত নয় মাসে তিনি দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন, মিটিং করেছেন, কথাও বলেছেন গণমাধ্যমে এবং বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাহলে কেন তাকে জরুরি তলব?
কূটনৈতিক পাড়ায় চাওড় আছে, আহমেদ মারুফ সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছেন এক বাংলাদেশি সরকারি নারী কর্মকর্তার সঙ্গে। এ তথ্যের সম্পূর্ণ সত্যতা যদিও মেলেনি, তবে পাক হাইকমিশনার সম্প্রতি কক্সবাজার ভ্রমণের সময় যে হোটেলে ছিলেন, সেখানে দেখা গেছে ওই নারীকেও। ওই নারী বাংলাদেশে ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত।
সূত্র জানায়, হাইকমিশনার কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত হোটেল সি-পার্লে ওঠেন। সেখানে সেই নারীসহ সঙ্গে ছিলেন অপর এক বন্ধু। ৯ মে নিজ গাড়ি করে বন্ধু ও সেই নারীকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান সৈয়দ আহম্মেদ মারুফ। যদিও এসব অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এসব শুধুই আরোপিত বা গুঞ্জন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্টের পর ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কে গতি আনার বিষয়ে ‘অত্যন্ত সক্রিয়’ ভূমিকায় সৈয়দ মারুফকে দেখা যায়। অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি নানা পর্যায়ে তিনি নিয়মিত বৈঠক করে আসছিলেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবসহ বিভিন্ন সফর আয়োজনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। গত ৯ মাসে সৈয়দ মারুফ চষে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা। সর্বশেষ তিনি ৯ মে কক্সবাজার সফর করেন। ‘অতি সক্রিয়’ এই কূটনীতিকের হঠাৎ ছুটিতে যাওয়া নিয়ে ‘রহস্য’ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানান জল্পনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।
সৈয়দ মারুফ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এফপি/এমআই