১৮৮০ সালের কথা। শ্রীমঙ্গলে তখন বাণিজ্যিক চা চাষাবাদের জোয়ার। সুদূর ব্রিটেন থেকে তখন টি প্লান্টারদের আগমন ঘটতে থাকে এখানে। চা-বাগানের ঘন সবুজ প্রকৃতির মমতায় জড়িয়ে পড়েন টি প্লান্টাররা। দীর্ঘ কর্মজীবনের শেষ পরিসরে পরপারের ডাক আসে এক সময়। চা বাগানেই ঘটে তাঁদের জীবনের পরিসমাপ্তি। এসব টি-প্লান্টার এবং তাঁদের স্বজনদের সমাহিত করার স্থানটির নামই ডিনস্টন সিমেট্রি। এটি শতবর্ষের স্মৃতি বিজড়িত।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কি.মি. দূরে এর অবস্থান। আজ থেকে প্রায় ১৭০ বছর আগে শ্রীমঙ্গলে ডিনস্টন সিমেট্রি’র গোড়াপওন হয়। জেমস ফিনরে টি’ কোম্পানি এই সিমেট্রি’র রক্ষনাবেক্ষন করে আসছে। ১৮৮০ সালে শ্রীমঙ্গল অঞ্চলে ব্রিটিশদের দ্বারা বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হবার পর সুদূর ব্রিটেন থেকে এখানে টি প্ল্যান্টারদের আগম ঘটতে থাকে। জাহাজ, ঘোড়ার গাড়ি কিংবা পায়ে হাঁটার সেই যুগে যেসব বিদেশী এই অঞ্চলে মারা যান সেই সব বিদেশীদের সমাহিত করা হয় শ্রীমঙ্গলের ডিনস্টন সিমেট্রিতে।
চিরসবুজ চা বাগানের মাঝে অবস্থিত এই সিমেট্রিতে বিদেশীদের কবর রয়েছে ৪৬টি। তার মধ্যে একই কবরে একই সাথে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছে এক বৃটিশ দম্পতি। এখানে শায়িত আছে ৯টি নিষ্পাপ শিশুর মরদেহ।
১৮৮৫ সালের ৩০ আগস্ট রবার্ট রয়বেইলি কর্মরত অবস্তায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক। ওই সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৩৮ বছর। তাাঁকেই প্রথম সমাহিত করা হয় এই সিমেট্রিতে।
একই বছরের আগস্ট মাসে এবং ১৮৯৬ সালের জুনে শিশু উইলিয়াম জন ও ডেভিড সহাবি’র মৃত্যু হলে তাদেরও এখানে সমাহিত করা হয়। ১৯১৮ সালের ১৮ মে জর্জ উইলিয়াম পিটারের সহধর্মিনী মেরি এলিজাবেথ পিটার মারা গেলে তাঁকে এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। স্ত্রী’র মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে ১৯১৯ সালের ২ অক্টোবর জর্জ উইলায়াম পিটারও পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নেন। ডিনস্টন সিমেট্রিতে স্ত্রীর পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। ১৯১৯ সালের ২০ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলের দারাগাঁও চা বাগানের টি-প্লান্টার এডওয়ার্ড ওয়ালেস মারা গেলে তাঁকে এখানে সমাধিস্থ করা হয়। ১৯৩৭ সালের প্রথম দিকে হান্ট নামের একজন ব্রিটিশ টি-প্লান্টার কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এবং তাঁকেও এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। ১৯৩৯ সালে বিমান দুর্ঘটনায় বিমানের দু’জন চালকের মরদেহও স্থান পায় ডিনস্টন সিমেট্রিতে।
১৯৩৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৩৫ বছর বয়সে গিলবার্ড হেনরি টেট শ্রীমঙ্গলের রাজঘাট চা বাগানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জানা গেছে, ডিনস্টন সিমেট্রিতে সমাহিত গিলবার্ড হেনরি টেটের পুত্র পিটার টেট পিতার সমাধি দেখতে প্রথমবারের মতো শ্রীমঙ্গলে এসেছিলেন। গিলবার্ড হেনরির স্ত্রী’র অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী তার মৃত্যুর পর মরদেহের ভম্ম প্রিয়তম স্বামীর পদপ্রান্তে অশ্রুসজল নয়নে রেখে গেছেন পুত্র পিটার টেট।
ডিনস্টন সিমেট্রিতে একটিতে প্রিয়তম স্বামীর উদ্দেশে প্রিয়তমা স্ত্রী জেসিজি লিখে গেছেন- ‘In loving memory of my dear husband.’
এফপি/রাজ