Dhaka, Tuesday | 30 December 2025
         
English Edition
   
Epaper | Tuesday | 30 December 2025 | English
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টির শোক
সাত দিন শোক পালনের কর্মসূচি বিএনপির
এভারকেয়ারের সামনে নিরাপত্তা জোরদার
যে কারণে ছুটি কমল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
শিরোনাম:

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:১১ এএম  (ভিজিটর : ১৪)

বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ফলে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বের ইতিহাসে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন।


প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীলতা ফিরে পায়। এর ফলে পরবর্তী কয়েক দশকে দেশের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। তিনি বৈদেশিক সাহায্যনির্ভরতা কমাতে উদ্যোগ নেন।


এরশাদ সরকারের শেষ বছরে বাংলাদেশ পুরোপুরি বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। খালেদা জিয়া সরকারের বিশ্বস্ত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সামষ্টিক স্থিতিশীলতা ও আর্থিক শৃঙ্খলাকে গুরুত্ব দিয়ে অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেন।


বেগম জিয়ার অধীনে ভ্যাট প্রবর্তন এবং রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে সাহায্য নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে থাকেতার প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশের জিডিপি গড়ে বছরে ৪.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। এরশাদ আমলে এই হার ছিল ৩.৬ শতাংশ।


তার সরকার অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন ১৯৯৩সহ গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করে। প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।


১৯৯৪ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা এবং দশম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ চালু করা হয়। সরকার সে সময় চারটি প্রকল্প হাতে নেয়- মহিলা মাধ্যমিক স্কুল সহায়তা প্রকল্প ২, মহিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রকল্প, মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন প্রকল্প এবং মহিলা মাধ্যমিক শিক্ষা বৃত্তি প্রকল্প


১৯৯৩ সাল থেকে শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু করা হয়, যা ১৯৯৬ সালের মধ্যে ১২৫৫টি ইউনিয়নে সম্প্রসারিত হয়। ২০০১ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহায়তায় দেশের সর্বত্র প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা হয়।


১৯৯১ সালে তার দায়িত্ব গ্রহণের সময় স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের অনুপাত ছিল ৫৫ থেকে ৪৫। ১৯৯৬ সালে তা দাঁড়ায় ৫২ থেকে ৪৮। ১৯৯০ সালে প্রাথমিক স্তরে তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় এক কোটি বিশ লাখ, যার মধ্যে ছাত্রী ছিল প্রায় চুয়ান্ন লাখ। ১৯৯৬ সালে তালিকাভুক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক কোটি ছিয়াত্তর লাখ, যার মধ্যে ছাত্রী ছিল প্রায় চুরাশি লাখ। অর্থাৎ পাঁচ বছরে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ প্রায় ত্রিশ লাখ বৃদ্ধি পায়।


১৯৯৩ সালের অক্টোবরে দি নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছিল, ‘এখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মিসেস জিয়া মেয়েদের শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণকে অত্যন্ত জোর দিচ্ছেন।’


বিআইডিএসের গবেষণা অনুযায়ী ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় ২৯ শতাংশ। পরের দশকে এই হার দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেনি। বেগম জিয়া দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশে তৈরি পোশাক কারখানা ছিল ৮৩৪টি। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৫৩টিতে। এই সময়ে রপ্তানি আয়ও সাড়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পায়।


পরিবেশ রক্ষায় তাঁর সরকারের বড় পদক্ষেপ ছিল ১৯৯২ সালে প্রথম জাতীয় পরিবেশ নীতি প্রণয়ন এবং ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন পাস।


বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু হয় এবং প্রায় দুই লাখ সত্তর হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বেগম জিয়া তাদের আশ্রয় দেন এবং দ্রুত প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেন।


বাংলাদেশ বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক সমস্যার রূপ দিয়ে জাতিসংঘে উত্থাপন করে। ১৯৯২ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট বুশকে মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরির আহ্বান জানান। পরবর্তী সময় জাতিসংঘের হাইকমিশনার এবং মিয়ানমার সরকারের মধ্যে চুক্তি হয় এবং ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৩ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয় মিয়ানমার।


১৯৯১ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় গোর্কি যখন আঘাত হানে তখন খালেদা জিয়ার সরকার ক্ষমতায় এসেছে মাত্র দুই মাস। সেসময় দেশের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা ছিল দুর্বল। ঘূর্ণিঝড়ের পর তিনি নিজে উপকূলে গিয়ে উদ্ধারকাজ তদারকি করেন। তার আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, পাকিস্তান ও জাপানের সেনা সদস্যরা ‘অপারেশন সি অ্যাঞ্জেল’ নামে ঐতিহাসিক মানবিক ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নেয়।


সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার ১৯৯৩ সালে উপকূলীয় সবুজবেষ্টনী তৈরির প্রকল্প হাতে নেয়। ১৯৯৫ সালের ২ মার্চ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক তা অনুমোদন করে এবং একই বছরের ১৮ এপ্রিল ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই সবুজবেষ্টনী পরবর্তী সময়ে বহু ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


এফপি/অ

সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: [email protected], [email protected], [email protected]
🔝