জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রতিবেদন ঘিরে ফের প্রশাসনে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠনগুলো বিরোধিতা করছেন তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সুপারিশের। বিভিন্ন সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। এমনকি সুপারিশের বিরোধিতা করে বিবৃতি নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোর ঘটনাও ঘটছে।
সংস্কার কমিশনের সদস্যরা বলছেন, দেশ ও মানুষের স্বার্থকে ঊর্ধ্বে রেখে তারা সুপারিশগুলো দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এতে হয়তো কোনো ক্ষুদ্র গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করতে পারে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ও প্রশাসনে দীর্ঘদিনের বৈষম্য দূর করতে ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সংস্কার আনতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গত ৩ অক্টোবর ৮ সদস্যের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশনের প্রধান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। পরে কমিশনের সদস্য সংখ্যা আরও তিনজন বাড়ানো হয়।
সুপারিশ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিশনকে ৯০ দিন (তিন মাস) সময় দেওয়া হয়। এরপর তিন দফা মেয়াদ বাড়ানো হয় কমিশনের। শেষে গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন।
আমরা আমাদের প্রতিবেদন তৈরি করে দিয়েছি, এখন এটার ভালো-মন্দ যাচাই করবে মানুষ। যে কোনো কাজ করতে গেলে কিছু লোক সুবিধা পায়, কিছু লোকের হয়তো প্রত্যাশা পূরণ হয় না। তবে কারও প্রত্যাশা থাকতেই পারে, তবে সেটা কতটুকু যৌক্তিক সেটাও বিবেচনা করতে হবে।- কমিশনের সদস্য সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মো. হাফিজুর রহমান ভুঞা
কমিশনের প্রতিবেদনকে মোট ১৭টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে। দুই শতাধিক সুপারিশ পেশ করা হয়েছে ১৪টি শিরোনামে। কমিশন সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের সুবিধার্থে স্বল্পমেয়াদি (ছয় মাস), মধ্যমেয়াদি (এক বছর) ও দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
প্রতিবেদন দাখিলের পর বিভিন্ন সুপারিশের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিবৃতি বা প্রতিবাদলিপি দিয়েছে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএস) ও বাকি ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। এছাড়া কৃষি, পরিবার পরিকল্পনা, পরিসংখ্যান ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠনও আলাদা করে ক্যাডার সংশ্লিষ্ট সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে।
এর আগে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া সুপারিশ নিয়েও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ক্যাডার কর্মকর্তারা। তখন কমিশন প্রকাশিত কয়েকটি খসড়া সুপারিশ ঘিরে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব ও চরম আকার ধারণ করেছিল, যার রেশ এখনো আছে।
কমিশনের সদস্য সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মো. হাফিজুর রহমান ভুঞা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিবেদন তৈরি করে দিয়েছি, এখন এটার ভালো-মন্দ যাচাই করবে মানুষ। যে কোনো কাজ করতে গেলে কিছু লোক সুবিধা পায়, কিছু লোকের হয়তো প্রত্যাশা পূরণ হয় না। তবে কারও প্রত্যাশা থাকতেই পারে, তবে সেটা কতটুকু যৌক্তিক সেটাও বিবেচনা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি সবার ওপরে দেশের স্বার্থ রক্ষা করার। কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের স্বার্থকে আমরা বড় করে দেখিনি। আমরা জাতি হিসেবে তো খুব একটা এগোতে পারিনি। একটি জায়গায়ই ঘুরপাক খাচ্ছি। এ কারণে বহু মানুষকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। যে জন্য এই ত্যাগ, সেটি (সংস্কার) যদি আমরা বাস্তবায়ন না করতে পারি, তাহলে তো হলো না। তাই আমরা দেশটাকে সামনে রেখে কাজটি করেছি। এতে হয়তো অনেকে মনে করতে পারে, আমরা মনে হয় বঞ্চিত হয়েছি।’
‘দেখতে হবে দেশটা কীভাবে আরও ভালোভাবে এগোবে। কর্তৃত্বপরায়ণ কোনো সরকার যাতে আর দেশের ওপর চেপে না বসে। এছাড়া যাদের মানুষের সেবা করার কথা, তারা যদি নির্যাতন করে তাহলে তো হবে না।’ বলেন হাফিজুর রহমান ভুঞা।
এফপি/এমআই