বাংলাদেশ সেনা ও নৌবাহিনীতে সদস্য পদ নিয়োগের কোন বিজ্ঞপি প্রকাশ হলে সক্রিয় হয়ে ওঠে একটি প্রতারক চক্র। তাদের খপ্পরে পড়ে সহায়ম্বলহীন হয়ে পড়েন সহজ-সরল মানুষ। এমন এক চক্রের কবলে পড়ে নি:স্ব হয়েছে রাজশাহীর নওগা জেলার মো. রাজু ও মো. ফারুখ হোসেনের পরিবার।
তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে খুলনা নৌবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা আজ শনিবার দুপুরে সোনাডাঙ্গা থানাধীন সঙ্গিতা সিনেমা হলের সামনে থেকে আটক করে প্রতারক চক্রের সদস্য মো. তরিকুল ইসলাম ওরফে তারা মিয়াকে (৬২)। পরে তাকে সোনাডাঙ্গা থানায় সোপর্দ করা হয়। এই প্রতারক কখনও নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য আবার কখনও পুলিশের সাবেক সদস্য হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিত। আটক তরিকুল ইসলাম খুলনা নগরীর খালিশপুর থানাধীন ১১৭ গোয়লখালী এলকার বাসিন্দা মোকাম মোল্লার ছেলে।
প্রতারণার শিকার হওয়া মো. রাজু বলেন, নৌ বাহিনীতে সদস্য পদে নিয়োগ পরিক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য ছেলে মো. রাকিবকে নিয়ে খুলনায় আসেন। এরপর শফিক নামে এক দালালের সাথে তার পরিচয় হয়। ছেলেকে চাকরি পাইয়ে দিতে তার সাথে ৮ লাখ টাকা চুক্তি হয় এবং তারা মিয়া নামে নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তার সাথে তাকে মোবাইলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তারা মিয়া তার ছেলেকে নৌবাহিনীতে চাকরী পাইয়ে দেওয়ার আস্বাস দেন।
তিনি আরো বলেন, (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে মোবাইলের মাধ্যমে তাকে প্রথমে ২০ হাজার এবং একইদিন দুপুরে আরও ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। পরের দিন রাতে প্রতারক তারা মিয়া প্রত্যায়ন পত্র দিলে তারা বাড়িতে চলে যান।
তিনি বলেন, প্রতারক তারা মিয়া ফোন দিয়ে দালাল শফিকের সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ এবং শফিককে কত টাকা দিয়েছেন তা ফেরত নেওয়ার জন্য তাদের চাপ দিতে বলে। পরে তাদের জানানো হয় নৌবাহিনীতে নিয়োগের জন্য তাকে আরও ৩ লাখ টাকা প্রদানের কথা জানানো হয়। নৌবাহিনীতে নিয়োগ পত্র নেওয়ার জন্য তারা বাড়ির গরু, ছাগল এবং এনজিও থেকে ঋণ করে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা প্রতারক তারা মিয়াকে দেন।
তারা মিয়া তাকে একটি নীল কাগজ এবং নিয়োগপত্র ধরিয়ে দিয়ে কাউকে বিষয়টি না জানানোর জন্য বলে। (২৬ নভেম্বর) রক্ত পরীক্ষার কথা বলে আরও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়। চাকরী দেওয়ার কথা বলে তার কাছ ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। তারা বিভিন্নস্থানে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন যে নিয়োগপত্র এবং কাগজ দেওয়া হয়েছে তার সবই ভুয়া।
অপর অভিযোগকারী মো. ফারুখ হোসেন বলেন, এক মামার মাধ্যমে তারা মিয়ার সাথে মোবাইলে পরিচয় হয়। মোবাইলে কথা বলার একপর্যায়ে চাকরির চুক্তি হয়। চুক্তি হয় ৮ লাখ টাকা।
নিযোগপত্র দিয়ে আমার কাছ ২ লাখ টাকা নিয়েছে। রক্ত পরীক্ষার কথা বলে সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। তবে রক্ত পরীক্ষা করেনি। আজ ৭০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা জানালে আমরা খুলনায় আসি।
খুলনায় এসে আমরা নৌবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করলে তারা মিয়ার বর্ণিত ঠিকানায় চলে আসি। পরে নৌবাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে সে আমার কাছ থেকে মোট ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। থানায় বসে আছি। পুলিশ অপেক্ষা করতে বলেছে বলে তিনি জানান।
সোনাডঙ্গা থানার ওসি তদন্ত অনিমেষ মন্ডল জানান, নৌবাহিনীর সদস্যরা দুপুরে এক প্রতারককে আটক করে পুলিশের নিকট দিয়েছে। থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এফপি/জেএস