Dhaka, Monday | 1 December 2025
         
English Edition
   
Epaper | Monday | 1 December 2025 | English
খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন: আহমেদ আযম খান
ঢাকায় তাপমাত্রা আরো কমবে
মহান বিজয়ের মাস শুরু
ভোট দিতে ৯২ হাজার প্রবাসীর নিবন্ধন
শিরোনাম:

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার

রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় ফোনে আড়ি পেতে মাদক ব্যবসা

প্রকাশ: সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১:৪৭ পিএম  (ভিজিটর : ২৮)

দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ফোনে আড়ি পেতে মাদক কারবারি চিহ্নিত করতে। অথচ আড়িপাতার তথ্য কাজে লাগিয়ে উলটো মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (নারকোটিক্স) একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিশেষ করে সিপাই এবং ওয়্যারলেস অপারেটর পদমর্যাদার কতিপয় কর্মচারী অপকর্মে জড়িত। তবে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও সন্দেহের বাইরে নন।

এখানেই শেষ নয়, প্রাইজ পোস্টিং আর পদোন্নতির লোভে মাদক চোরাচালানের তথ্যের বিনিময়ে ‘সোর্স মানি’ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। এভাবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে মোটা অঙ্কের সোর্স মানি হাতিয়ে নিচ্ছেন কতিপয় প্রভাবশালী কর্মকর্তা। সম্প্রতি চট্টগ্রামে নারকোটিক্সের এক এএসআই (সহকারী উপপরিদর্শক) বিপুল পরিমাণ মাদকসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর এ বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) ফোনকল ইন্টারসেপশন বা আড়িপাতা কার্যক্রমের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও তথ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও বড় ধরনের প্রশ্ন সামনে আসছে।

সূত্র জানায়, ১১ নভেম্বর নারকোটিক্সের এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ৬০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। এ সময় তার কাছে বেশকিছু অজ্ঞাত ফোন নম্বরের সিডিআর (কল ডিটেইলস রেকর্ড), লাইভ লোকেশন ও ভয়েস রেকর্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ টেলিমনিটরিং তথ্য পাওয়া যায়। অবশ্য এর আগে গত বছর ১৮ আগস্ট আমজাদ হোসাইন নামের আরেক এএসআই ৭০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিজিবির হাতে গ্রেফতার হন।

জানা যায়, সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীদের ওপর নজরদারি চালাতে ২০২১ সালে এনটিএমসিতে প্রবেশাধিকার পায় নারকোটিক্স। অধিদপ্তরের পরিচালক অপারেশন (পুলিশ বাহিনী থেকে প্রেষণে নিযুক্ত) এবং গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত পরিচালকের (এনএসআই থেকে প্রেষণে নিযুক্ত কর্মকর্তা) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে টেলিমনিটরিংয়ের কাজ চলে। এনটিএমসির নারকোটিক্স ডেস্কে সিপাই এবং ওয়্যারলেস অপারেটর পদমর্যাদার ২৭ জন কর্মচারী পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তারা মূলত সন্দেহভাজনদের ফোনালাপ শোনা (ট্রিগারিং), অবস্থান জানা এবং সিডিআরসহ টেলিযোগাযোগসংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেন। প্রাপ্ত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে এনটিএমসির নারকোটিক্স ডেস্কে পাঠানো হয়। এরপর এসব তথ্যের ভিত্তিতে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হয়।

যেভাবে মনিটরিং হয় : মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা টেলিমনিটরিং সংক্রান্ত তথ্য পেতে নির্ধারিত ফরমে (এলআইসি ফরম) সন্দেহভাজনদের ফোন নম্বর উল্লেখ করে এনটিএমসিতে পাঠান। পরবর্তী ধাপে সংশ্লিষ্ট সিপাই ও ওয়্যারলেস অপারেটররা ইন্টারসেপশন তথ্য (ভয়েস কল রেকর্ড, এসএমএস, সিডিআর এবং লোকেশন) সংগ্রহ করেন। ভয়েস কল ট্রিগারিং করতে কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমোদন নিতে হয়।

সর্ষের মধ্যে ভূত : এনটিএমসির অভ্যন্তরে অবস্থিত নারকোটিক্স ডেস্ক একসঙ্গে ৭শ’র বেশি ফোন মনিটর করতে পারে। এক্ষেত্রে ভয়েস কল রেকর্ড ছাড়াও বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপসহ ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ অ্যাপসেরও তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া পুলিশের অপরাধ তথ্যভান্ডার (সিডিএমএস) এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সার্ভার থেকেও তথ্য নিতে পারে নারকোটিক্স।

সূত্র বলছে, মুঠোফোনসহ যে কোনো ফোনকলে প্রবেশ করে নানামুখী এসব স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারের অবারিত সুযোগকে অপরাধ দমনের কাজে লাগানোর পরিবর্তে সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছেন। যা একজন ব্যক্তির গোপনীয়তার সুরক্ষা বিঘ্নিত করা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। মূলত এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে যথাযথভাবে মনিটরিং ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত না করায় এমন অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক গবেষক ড. আসিফ মোহাম্মদ শাহান বলেন, নাগরিকের গোপনীয়তা সুরক্ষার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে স্বচ্ছতার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করলে দ্রুততম সময়ে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

যথেচ্ছ ট্রিগারিং : এনটিএমসিতে টেলিমনিটরিং বিষয়ে প্রতি মাসে নারকোটিক্স মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। ৬ নভেম্বর উপ-পরিচালক আবু জাফরের পাঠানো এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবর থেকে এনটিএমসিতে মোট ৭১৮টি ফোন নম্বরের ভয়েস কল রেকর্ড করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রধান কার্যালয়ের থেকে ১১৩টি নম্বর ট্রিগারিংয়ের জন্য বসানো হয়েছে। এছাড়া মাদকপ্রবণ কক্সবাজারের ৩০টি এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৯টি, ঢাকা মেট্রো উত্তর ৪৯টি ও দক্ষিণ ১৬টি, গাজীপুর জেলা কার্যালয় ৩৩টি, টেকনাফ বিশেষ জোন ২৪টি, রাজশাহী বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের ৩২টিসহ সারা দেশে ৫৩টিরও বেশি জেলায় সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ীদের ফোন নম্বর ট্রিগারিং করছে নারকোটিক্স।

তবে খোদ নারকোটিক্স কর্মকর্তারাই ফোন নম্বর ট্রিগারিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক অসচ্ছতার অভিযোগ তুলছেন। একজন সহকারী পরিচালক বলেন, সাধারণত মাঠপর্যায় থেকে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হয়। অথচ শুধু প্রধান কার্যালয় থেকেই এত বেশিসংখ্যক নম্বর কেন ট্রিগার করা হচ্ছে তা তাদের বোধগম্য নয়। মাদকসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ছাড়াই ব্যক্তিগত শত্রুতা বা সমাজের অন্য কারও স্বার্থ হাসিলের জন্য কারও ফোন নম্বর মনিটর করা হচ্ছে কিনা তা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় টেলিমনিটরিং সুবিধার এ অপব্যবহারের শঙ্কা দিন দিন আরও বাড়বে।

সূত্র বলছে, এভাবে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ভয়েস কল রেকর্ড ছাড়াও প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য নিয়েও নারকোটিক্সে এক ধরনের বাণিজ্য শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এনটিএমসির মনিটরিং ডেস্ক নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিশেষ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এমনকি এনটিএমসির মনিটরিং ডেস্কে দায়িত্ব পালনকারী কয়েকজনের বিরুদ্ধে ঘুস বাণিজ্যের মতো গুরুতর অভিযোগ এখন ওপেন সিক্রেট। কিন্তু দায়িত্বশীলদের কেউই বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে রাজি নন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইন্সপেক্টর বলেন, যারা ভয়েস কল শোনার জন্য এনটিএমসিতে যান তাদের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওপেন সিক্রেট। এদের কেউ কেউ প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য বিক্রি করে দেন। এছাড়া উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য এবং মামলার বিপরীতে বরাদ্দ সোর্স মানির পুরোটা দিয়ে দেওয়ার চুক্তিতে কেউ আবার গোয়েন্দা তথ্য কিনে নেন।

সূত্র জানায়, টেলিমনিটরিংয়ের জন্য তেজগাঁওয়ের এনটিএমসি কার্যালয়ে নারকোটিক্স থেকে সিপাই এবং ওয়্যারলেস অপারেটরদের পাঠানো হয়। কিন্তু খোদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই এদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে তথ্য পাচার এবং দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। এদের মধ্যে সিপাই রিফাত হোসাইন, নাসিম, শাহরিয়ার বাবর, সোহরাব ও আলামিন অন্যতম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপ-পরিচালক বলেন, সিপাই শাহরিয়ারের বাড়ি চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের মাদক ব্যবসায়ীরা আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। এ কারণে তাদের কথা সহজে বোঝার জন্য শাহরিয়ারকে টেলিমনিটরিংয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু শাহরিয়ার নিজেই তথ্য পাচার, দুর্নীতি এবং মামলা বাণিজ্য সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি তার বিরুদ্ধে একজনের দেওয়া নম্বরের মনিটরিং তথ্য আরেকজনকে দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

টেলিমনিটরিংয়ে অস্বচ্ছতা, তথ্য বিক্রি এবং মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (নারকোটিক্স) মহাপরিচালক হাসান মারুফ বলেন, মাদক বাণিজ্য প্রতিরোধের ক্ষেত্রে টেলিমনিটরিং খুবই কার্যকরী একটি উপায়। এসব নিয়ে কেউ কেউ বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করেন। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিতের চেষ্টা করা হয়। তারপরও কেউ যদি কোনো ধরনের অপতৎপরতায় জড়িত থাকে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এফপি/এমআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝