মাক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি প্লটের আবদার করেছিলেন আদরের মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। আর তাতেই অবিশ্বাস্য দ্রুততায় মাত্র তিনদিনে পেয়ে যান পূর্বাচলের কূটনৈতিক এলাকায় ১০ কাঠার একটি প্লট। রাজউক প্লটটি বরাদ্দ দিলেও পুতুল রাজউকের কাছে নিয়ম মেনে কোনো আবেদনই করেননি। প্লটের বরাদ্দ হওয়ার পর দাখিল করেন হলফনামা, আর সেখানে রাজধানীতে থাকা নিজেদের সব সম্পত্তির তথ্য গোপন করেন। এভাবেই পূর্বাচলের কূটনৈতিক এলাকায় মা শেখ হাসিনার মতো কন্যা পুতুলও পেয়ে যান ১০ কাঠার আরেকটি প্লট।
চলতি বছরের ১০ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আদালতে প্লট দুর্নীতি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। এ তথ্য উঠে আসে অভিযোগপত্রে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আলোচিত প্লট দুর্নীতির ছয়টি মামলার মধ্যে শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করা হয়েছে। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করবেন। শেখ রেহানা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও আজমিনা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অপর তিনটি মামলায় রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য হয়েছে আগামী সোমবার (১ ডিসেম্বর)। প্লট বরাদ্দ পাওয়া এই ছয়জন ছাড়াও মোট ৪৭ জনকে এই ছয়টি মামলায় আসামি করা হয়েছে। রাজউকের কর্মকর্তা খুরশীদ আলম ছাড়া বাকি সব আসামি বর্তমানে পলাতক আছেন।
এর আগে গত ১২ জানুয়ারি রাজধানীর পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ পুতুল, শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারি পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামি সায়মা ওয়াজেদ রাজউকের প্রকল্পসমূহে প্লট বরাদ্দের জন্য রাজউকের কাছে নির্ধারিত ফরমে কোনো আবেদন করেননি। তার আবেদনটি কোনো প্রকার যাচাই-বাছাইও করা হয়নি। এ কারণে দ্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস) রুলস ১৯৬৯-এর বিধি-৪ এর পদ্ধতিগত বিধান লঙ্ঘন হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নিজের বা পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারভুক্ত এলাকার বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা রয়েছে। তবুও অসৎ উদ্দেশ্যে হলফনামায় এসব তথ্য গোপন করেন। পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে নিজের মাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করেন। শুধু তাই নয়, তিনি রাজউকে কোনো আবেদন করেননি, এমনকি মায়ের (শেখ হাসিনা) কাছেও কোনো আবেদন জমা দেননি। এরপরও তিনি পূর্বাচলের নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার একটি প্লট (২৭নং সেক্টরের ২০৩নং রাস্তার ১৭নং প্লট) বরাদ্দ নেন এবং নিজের নামে রেজিস্ট্রিভুক্ত করেন। তিনি সরকারি জমি আত্মসাত করে নিজের ভোগদখলে রেখেছেন। এর মাধ্যমে আসামি পুতুল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস) রুলস ১৯৬৯-এর ১৩এ (১)সি বিধান লঙ্ঘন করেছেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, সাময়া ওয়াজেদ পুতুলের প্লটের জন্য শেখ হাসিনার নির্দেশে তাঁর কার্যালয়ের মাধ্যমে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করেন। শুধু তাই নয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে রাজউক প্লট বরাদ্দ করে। এতে আসামিরা জেনেশুনে আইন ও বিধির লঙ্ঘন করেন।
মামলায় সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন শেখ হাসিনা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারি সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) হাফিজুর রহমান, উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) হাবিবুর রহমান, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) শেখ শাহিনুল ইসলাম, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ সালাহ উদ্দিন, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহম্মেদ।
দুদক প্রসিকিউটর খান মো. মাইনুল হাসান (লিপন) বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫(ক), ৪০৯, ৪২০, ১০৯ এবং দুদক আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। ৪০৯ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও জরিমানা। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছি।
এফপি/এমআই