Dhaka, Thursday | 18 September 2025
         
English Edition
   
Epaper | Thursday | 18 September 2025 | English
আমেরিকার সিকিউরিটি ডিভাইসের মাদারবোর্ড রপ্তানি করছে ওয়ালটন
নৌকা ভ্রমণে গিয়ে নিখোঁজ, দু’দিন পর নদীতে মিলল মরদেহ
আবাসন খাত রক্ষাই অর্থনীতির সুরক্ষা
১৮ দিন পর হাসপাতাল ছাড়লেন নুর
শিরোনাম:

হামলা, মামলা ও হয়রানির প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিক সমাবেশ

প্রকাশ: বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫, ২:১৫ পিএম  (ভিজিটর : ৪৮)

মামলা-গ্রেফতার, নির্যাতনে আলোচনায় এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকরা। রোববার এ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সমাবেশে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

সত্তর বছর বয়স্ক সাংবাদিক আ. ফ. ম. কাউসার এমরানের দিন কাটছে আতঙ্কে। ফেসবুকে তিনটি পোষ্টে হত্যার হুমকী ছাড়াও তার পরিবার নিয়ে লেখা হয় আপত্তিকর কথাবার্তা। জানান, এরপর থেকে নিরাপত্তাহীন রয়েছেন। ঘর থেকে বের হননা, এমনকি মসজিদে যেতেও সাহস পাননা। আরেকজন সাংবাদিক আল মামুন জানান, নিউজ করলেই মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে, ট্যাগ লাগানো হয়। আমি কখনোই ছাত্রলীগ করিনি, কিন্তু আমাকে ছাত্রলীগ সভাপতি বানিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। আরো নানা ভাবে সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র উঠে এসেছে ওই সামাবেশে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা দেশে সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানীর প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সভায় জানানো হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের ৮ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে বাঞ্ছারামপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায়। ওই উপজেলার তেজখালীর একটি ঘটনায় জুলাই অভ্যুত্থানের পর দায়ের হওয়া মামলার আসামি হিসেবে গত এক বছর ধরে ঘরছাড়া দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি সজল আহমেদ। অথচ মামলায় উল্লেখিত দিনে সেখানে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। প্রথম আলোর সরাইল প্রতিনিধি বদর উদ্দিনকে জড়ানো হয়েছে ঢাকার একটি হত্যা মামলায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের অন্তত পাঁচজন সাংবাদিককে অভ্যুত্থান পরবর্তী দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলায় জড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে সম্প্রতি সরাইলের একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় গাজী টিভির জেলা প্রতিনিধি জহির রায়হানকে। ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে শহরের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। মামলা হওয়ার পর তৎকালীন পুলিশ সুপার মো: জাবেদুর রহমান সাংবাদিকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরাইল থানার ওসি’র কাছে তিনি ঘটনায় জহিরের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানতে চান। ওসি ‘না’ বলার পর তদন্তে তাকে অব্যাহতি দিতে বলেন। কিন্তু কোন তদন্ত ছাড়াই হুট করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গত ৬ই জুলাই কালেরকন্ঠের বিশ্বজিৎ পাল বাবু ও যমুনা টিভির আখাউড়া প্রতিনিধি মহিউদ্দিন মিশুর নামে মামলা হয়েছে ঢাকার বিমানবন্দর থানায়। আখাউড়ায় দৈনিক যুগান্তর ও আরটিভির দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে চাঁদাবাজি ও মানহানির মামলা। ইমিগ্রেশন পুলিশের ঘুষ-দূর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করায় রোজায় ইফতারের নামে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে গত ৭ই আগষ্ট ইমিগ্রেশনের ওসি মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার নিজে বাদী হয়ে এ মামলা করেন। বিজয়নগরে ফসলী জমির মাটি কাটার রিপোর্ট করায় মামলা দেয়া হয় সাংবাদিক মাঈনুদ্দিন মো: রুবেলের বিরুদ্ধে। সভায় সাংবাদিক পরিচয়ধারী নানা অপরাধে জড়িত দুর্বৃত্তদের ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের ব্যাক্তি চরিত্র হনন, চাঁদাবাজির বিষয়ে আলোচনা হয় এবং এসব অপরাধীদেরকে আনুকুল্য প্রদানের মাধ্যমে বর্তমান জেলা পুলিশ প্রশাসন সাংবাদিকদের আরো নিরাপত্তাহীন করে তুলেছেন বলে অভিযোগ উত্থাপিত হয়।

এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মামলা থেকে সাংবাদিকদের অব্যাহতি প্রদান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী জানানো হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব সভাপতি জাবেদ রহিম বিজনের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তৃতা করেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. বাহারুল ইসলাম মোল্লা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি মোহাম্মদ আরজু, দৈনিক সংবাদের মো.সাদেকুর রহমান, দৈনিক ইনকিলাবের খ. আ. ম. রশিদুল ইসলাম, চ্যানেল আইয়ের মনজুরুল আলম, দৈনিক আমাদের সময়ের দীপক চৌধুরী বাপ্পী, এটিএন নিউজের পীযূষ কান্তি আচার্য, দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিনের শেখ মো. শহিদুল ইসলাম, বাংলাভিশনের মো. আশিকুল ইসলাম, বাংলা টিভির আল আমীন শাহীন, দৈনিক জনতার তোফাজ্জল হোসেন, দৈনিক কুরুলিয়ার মো. ইব্রাহীম খান সাদাত, দৈনিক দিনকালের নিয়াজ মোহাম্মদ খান বিটু, দৈনিক আমার দেশের মফিজুর রহমান লিমন, দৈনিক ভোরের কাগজের সৈয়দ রিয়াজ আহমেদ অপু, মোহনাটিভির মো. শাহজাদা, মাইটভির আ. ফ. ম. কাউসারএমরান, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের মোশাররফ হোসেন বেলাল, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের ফরহাদুল ইসলাম পারভেজ, দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি মজিবুর রহমান খান, সময় টিভির উজ্জল চক্রবর্তী, দৈনিক ইস্টার্ণ মিডিয়ার নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া, দৈনিক করতোয়ার শাহজাহান সাজু, একাত্তর টিভির জালাল উদ্দিন রুমী, একুশে টিভির মীর মো. শাহীন, দৈনিক আজকালের মোজাম্মেল চৌধুরী, দৈনিক প্রথমআলোর শাহাদৎ হোসেন, দি এশিয়ানএজের আশিকুর রহমান মিঠু, আরটিভির আজিজুর রহমান পায়েল, দৈনিক একুশে আলোর সেলিম পারভেজ, দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশ্বজিৎ পাল বাবু, যমুনা টেলিভিশনের শফিকুল ইসলাম, এটিএন বাংলার ইসহাক সুমন, দৈনিক নয়াদিগন্তের মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, দেশ টিভির মেহেদী নূর পরশ, দৈনিক যুগান্তরের মো. ফজলে রাব্বি, এখন টিভির আজিজুল সঞ্চয়, নাগরিক টিভির আবুল হাসনাত মো. রাফি, দৈনিক বাংলাবাজারের আলমামুন, দৈনিক সংগ্রামের রোকনউদ্দিন, দীপ্ত টিভির রিফাত আন নাবিল মোল্লা প্রমুখ।

বক্তৃতায় ইফতেয়ার উদ্দিন রিফাত বলেন, হত্যা, চাঁদাবাজি ও মাদক মামলার আসামিরা এখানে সাংবাদিক পরিচয়ে নানা অপরাধে লিপ্ত। রিফাত আন নাবিল মোল্লা বলেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথম সাংবাদিকরা হতাশাগ্রস্ত। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ভুয়া সাংবাদিকরা মানুষের চরিত্রহননে নেমেছে। যাকে-তাকে আওয়ামী দোসর ট্যাগ দিয়ে মানসিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।এদের বিরুদ্ধে মূলধারার সকল সাংবাদিকদের সোচ্চার হতে হবে। আবুল হাসনাত রাফি বলেন, কিছু অপরাধী নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য এখন জাতীয়তাবাদী ট্যাগ লাগিয়ে সাংবাদিকতায় নেমেছে। বিগত সরকারের আমলে এদের কখনো দেখা যায়নি। মোজাম্মেল হক বলেন, আখাউড়ার মামলা পুলিশ নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য করেছে। সংবাদ বিপক্ষে গেলে ট্যাগ দেওয়াটা হলো ফ্যাসিবাদী চরিত্র। মফিজুর রহমান লিমন বলেন, ফেসবুকে সাংবাদিকদের মানহানি করা হচ্ছে। শাহাদৎ হোসেন বলেন,৫ আগস্টের পর থেকে মূলধারার সাংবাদিকদের চরিত্রহনন করছে একটি চক্র। রোকন উদ্দিন বলেন,রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে সাংবাদিকদের তাল মেলানো যাবেনা।সাংবাদিকদের সত্য তথ্য তুলে ধরতে হবে- সেটি যত কঠিনই হোক। উজ্জল চক্রবর্তী বলেন,সাংবাদিকতা করুন, নয়তো রাজনীতি- এই নীতি প্রেসক্লাবের অন্তর্ভূক্ত সকল সাংবাদিকদের জন্য বাস্তবায়ন জরুরি। শফিকুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের দোসর ট্যাগ দিয়ে উদ্দেশ্যে প্রণোদিত হয়রানি করা হচ্ছে। পীযূষ কান্তি আচার্য বলেন, ওসি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া চাঁদাবাজির মামলা করতে পারেনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখন পর্যন্ত যতজন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে- তারা এসব ঘটনায় কোনো ভাবেই জড়িত নয়। হয়রানির উদ্দেশ্যে এসব মামলায় তাদেরকে জড়ানো হয়েছে।

নিয়াজ মোহাম্মদ খান বিটু বলেন, ভূঁইফোড় সাংবাদিকরা সমাজের কীট। খ আ ম রশিদুল ইসলাম বলেন, প্রেসক্লাব সৃষ্টির পর থেকে এমন সংকটময় পারিস্থিতি আর আসেনি। সাদেকুর রহমান বলেন, নামধারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রেসক্লাব সচেষ্ট থাকবে। মঞ্জুরুল আলম বলেন,সৎ সাংবাদিকতা আর সৎসাহস থাকলে সাংবাদিকদের কেউ দমাতে পারবেনা।

মোহাম্মদ আরজু বলেন, সাংবাদিকরা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই সময়ে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নাই।

এফপি/এমআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝