একটি নোটারির মাধ্যমে বনের ও খাস ১ শত একর জমি বিক্রি করে দিয়েছে ঈদগড় ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড়ের সাবেক সদস্য আবুল কাসেম টুলু। এদিকে বনের জমি অবৈধভাবে দখল করে বিক্রি করার ১ যুগ পার হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এব্যাপারে কিছুই জানেন না।
সম্প্রতি এই বিষয় নিয়ে লামা বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য তাৎক্ষণিক তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে বনের জমি বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ঈদগড় ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড়ের সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কাসেম টুলু মেম্বার। যদিও নোটারি করার সময় ১ শত একরের মূল্য দেখানো হয়েছে ৮ লাখ টাকা। তার বিরুদ্ধে বনের ও খাস জমি নোটারি করে এই নোটারিতে ১ শত একর জমি বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সব জমিতে রাবার বাগান হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও তার নিজের দখলে রয়েছে ঈদগড় ইউনিয়নের ঈদগড় রেঞ্জের কালিমনিয়া নামক এলাকায় রাবার বাগান ও বরই বাগান করা প্রায় ৫০ একরের উপরে। ঈদগড় রেঞ্জের চেনছড়ি আগারঘোনা এলাকার বনের প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে লিচু বাগান করেছে বলে জানা গেছে।
লামার সাঙ্গু রেঞ্জ ও কক্সবাজারের উত্তর বনবিভাগের ঈদগড় রেঞ্জে বনের জায়গা দখল করে রাখলেও বন কর্মীদের সাথে রয়েছে তার বেশ সখ্যতা এমনটা জানিয়েছেন এলাকাবাসি। এমনকি এসব বিষয় নিয়ে বনবিভাগকে জানালে তা আবুল কাসেম টুলু মেম্বারের কাছে পৌঁছে যায় বলেও খবর রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১২ সালের ২ মে ঈদগড় এলাকার ছৈয়দ আহমদের ছেলে আবুল কাসেম টুলু ঈদগড় ইউনিয়নের সদস্যের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার ওয়ার্ড়ের পাশে লামা বনবিভাগের অধিনে সাঙ্গু রেঞ্জ থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী করলিয়ামুরা এলাকার মৃত অজি মিয়ার ছেলে ওবাইদুর রহমান, এবং ওবাইদুর রহমানের ছেলে হামিদুল হক, আজিজুল হক, শাহাব উদ্দিনের নামে রেজিঃ নং ১০(৫) ১২ নোটারি মূলে ১ শত একর জমি বিক্রি করে। এটির নোটারিতে কক্সবাজার নোটারি পাবলিক অফিসের এডভোকেট মোঃ আব্দুস ছোবাহানের নাম ও স্বাক্ষর রয়েছে এমনটা দেখা মিলে।
এ বিষয়ে আবুল কাসেম টুলুর কাছে জানতে চাইলে আমি এতোটুকু জমি বিক্রি করিনি। অন্যদিকে যেসব আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা ।
এদিকে ১নং খাস খতিয়ানের জমি থেকে শান্তি চুক্তির পর (১৯৯৭ সালে) বনবিভাগ লামাকে ২৪ শত একর জমি ৪ ধারা ও ৬ ধারায় প্রজ্ঞাপন জারি করে বলে জানা যায়। কিন্তু অদ্যবধি ২০ ধারা না হওয়ার কারণে এখনো বনের জায়গা নয় বলে জানান বনবিভাগের এক কর্মকর্তা। কারণ এখনো এই বিষয়ে আদালত কোন রায় প্রদান করেননি। যার কারণে জায়গা রক্ষা করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বন কর্মীদের। যার কারণ হিসাবে ২০ ধারা না হওয়ার কারণে এবং আদালতের রায় না আসায় এখনো তা কোন প্রকারের সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। বনের জমি এভাবে বিক্রি করে দখল বুঝিয়ে দিলেও বিগত দিনে সাঙ্গু রেঞ্জে দায়িত্বরত থাকা কোন কর্মকর্তা কথা তুলেননি। এমনকি এই বিষয় নিয়ে কোন আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ না করায় স্থানীয় সাধারণ জনগণ বনে তাদের গবাধি পশু নিয়ে যেতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বর্তমান সাঙ্গু রেঞ্জ কর্মকর্তা নুর হোসেন চৌধুরী জানান, আমি বেশিদিন হয়নি এই রেঞ্জে এসেছি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম বনের জমি নোটারি করে বিক্রি করা হয়েছে। আমি আমার অফিসকে জানিয়েছি বিষয়টি।
লামা বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি জানার পর তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। বৃষ্টি কমলেই তদন্ত শুরু হবে ।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসমত জাহান ইতু জানান, এই বিষয়ে কোন খবর আমরা এখনো পাইনি। যদি সঠিক তথ্য পাই তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এফপি/রাজ