তিস্তা নদীর পানি এক সময় বাড়ছে তো, এক সময় কমছে। পানি সামান্য কমতে থাকলে শুরু হয় ভাঙ্গন। এসময় ‘সবাই খালি ছবি তুলি নিয়্যা যায়, কেউ সাহায্য দেয় না। হামরা গরিব মানুষ, তিস্তা নদীতে ঘর ভাঙ্গি পড়িলো, এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজ নিলো না। কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনো না’।
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তিস্তা নদীর ভাঙ্গনের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত আমেনা বেগম। তার মতো ৫০টি পরিবার এখন নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অসহায় দিনপাত করছেন।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পানিয়ালের ঘাটসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের চিত্র এখন একই। নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে তীব্র আকার ধারণ করেছে ভাঙ্গন। নদী এখন রক্ষা বাাঁধের কাছে চলে এসেছে ভাঙ্গন। শেষ সময়ে চলছে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা। কিন্তু একদিকে জিও ব্যাগ ফেললেও চলছে অন্য দিকে ভাঙ্গন।
নদী পাড়ের গোলেজা বেগম (৪৫) বলেন, ‘এ যাবৎ ৬-৭ বার বাড়ি ভাঙা নাগছে তার। গাছপালা, জমিজমা সব নদীত চলে গেছে। বর্তমানে অন্যের জমিতে ঘর তুলে আছেন গোলেজা বেগম। পাননি কোন সাহায্য-সহযোগিতা।
শনিবার বিকেলে রংপুরের পীরগাছার ছাওলা ইউনিয়নের পানিয়ালঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকার প্রায় ৭০-৮০টি পরিবার গত ১০-১৫ দিনে তিস্তার ভাঙনে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ কেউ হয়েছেন নিঃস্ব। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৫টি পরিবারকে ইতোমধ্যে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা জানা গেলেও অনেকেই সেই সাহায্য পাননি।
নদীপাড়ের বাসিন্দা আকবার আলী জানান, জীবনে বহুবার নদীভাঙনের কারণে বাড়িঘর সরাতে হয়েছে। তিনি এর স্থায়ী সমাধান চান। তার অভিযোগ, এখন নদী ভাঙছে, আর এখনই জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এগুলো যদি শুকনো মৌসুমে দেওয়া হতো, তাহলে এই সময়ে ঠেকানো যেত। এখন এগুলো সব পানিতে চলে যাবে, কোনো কাজ হবে না।
এ বিষয়ে ছাওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, ভাঙন রোধে পাউবো থেকে ৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ৫৫টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। কিছু পরিবার বাদ পড়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করে শিগগিরই সহায়তা দেওয়া হবে।
উপজেলা প্রকল্প বায়স্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আলতাব হোসেন বলেন, নদী ভাঙ্গনের শিকার ৩০টি পরিবারকে এক বান্ডিল করে ঢেউটিন এবং নগদ ৩ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। আরো বরাদ্দের জন্য চাহিদা দেয়া হয়েছে। পেলে বিতরণ করা হবে।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মো. রাসেল বলেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সরকারিভাবে যা বরাদ্দ ছিল তা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং বরাদ্দ পেলে তা বিতরণ করা হবে।
এফপি/রাজ