বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেঁপে ফুলে উঠেছে তিস্তা নদী। বুধবার বিকেল ৬টায় হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি সমতল রেকর্ড করা হয় ৫২.১৮ মিটার, যা বিপদসীমার উপরে।
এরআগে মঙ্গলবার দুপুরে পানি ছিল বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর, রাতের ভারী বৃষ্টিতে কয়েক ঘণ্টায় বেড়ে যায় নদীর পানি। বুধবার সকাল ৬টায় ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিস্তায় পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৫ হাজার পরিবার। বন্যায় ডুবে গেছে গ্রাম-ফসল-সড়ক। নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার সদর, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও পাটগ্রাম উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বহু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এর মধ্যে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ি, সানিয়াজান, সিন্দুর্না, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে মানুষজন দুর্ভোগের মধ্যে আছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি গ্রামের মর্জিনা বেগমের বাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি, ডুবে গেছে চুলা ও সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। বাধ্য হয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন কালমাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায়। ষাটোর্ধ্ব বুলবুলি বেগমও একই দুর্দশায়। “চুলায় রান্না করা যাচ্ছে না, সব জিনিস ভিজে গেছে। স্কুলের বারান্দায় দিন কাটাচ্ছি,” বলেন মর্জিনা বেগম।
লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুরনা ইউনিয়নের নদী পাড়ের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম জানান, “পশুপাখি, শিশু, বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি। আমাদের বাড়িতেও পানি ঢুকছে, কিন্তু কেউ খোঁজ নিচ্ছে না।”
তৃতীয় দফায় এই বন্যায় আমন ধান,সবজি, পাটসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসল তলিয়ে গেছে। অনেক কৃষকের জমির ফসল ভেসে গেছে পানির স্রোতে। পানির চাপের কারণে বহু বাঁধ ও রাস্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে কালীগঞ্জের দক্ষিণ ভোটমারীতে ইস্ট্রাকো সোলার প্যানেল এলাকার কাছে তিস্তার মূল স্রোত লোকালয়ের দিকে ঢুকে পড়ছে, যা ভাঙনের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সোলার প্যানেল স্থাপন করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি, যা বাঁধ ও বসতভিটার জন্য হুমকি।
দক্ষিণ ভোটমারী এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, সোলার প্যানেলের কারণে পানির চাপ পড়ছে লোকালয়ের রাস্তা ও বাঁধে। এগুলো রক্ষা না করা হলে হাজার হাজার বসতভিটা আর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার রায় বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আগামী দু’দিন নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হতে পারে। পরিস্থিতি ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য ইউএনও দের বলা হয়েছে।তালিকা হয়ে গেলে দ্রুত ত্রাণ ও সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
এফপি/রাজ