টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবারও তিস্তা পাড়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ভাটি এলাকায় প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল। জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে চার উপজেলার অন্তত ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৬টার তথ্য মতে ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্ট পানি ৫১.৯৯ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যা বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার নিচে।
তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তার ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ব্যারাজের ভাটির দিকে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা, আদিতমারী, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোতে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে গেছে, ডুবে গেছে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক, মৌসুমি ফসল, পুকুর, খেলার মাঠ। অনেকে বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের উপর কিংবা উঁচু স্থানে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি পাকার মাথার বাসিন্দা সফিয়ার রহমান (৪৫) বলেন, গত ৩ দিন আগে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাড়িঘর তলিয়ে যায়। সে পানি নামতে না নামতেই আবারো পানি এসেছে বাড়িঘরে।
সফিয়ার রহমানের স্ত্রী নাজৃ্মা বেগম (৩৫) বলেন, গতকাল দুপুরের পর থেকে বাড়িতে পানি। বিছানা ছুয়ে পানির স্রোত যাচ্ছে। আমরা চরম বিপদে আছি। চুলা বিছানদয় তিলে রান্না করতে হচ্ছে। গরুছাগল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এবারের বন্যায় জেলার আদিতমারী উপজেলায় ৪৩০০, কালীগঞ্জে ২০০০, সদর উপজেলায় ৩০০০ এবং হাতীবান্ধা উপজেলায় ১০০০ পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পরা পরিবারগুলোর তালিকা করে সহায়তা প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এ দিকে তিস্তার পানি হ্রাস-বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। বিশেষ করে কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের দক্ষিণ ভোটমারী এলাকায় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটা ও স্থাপনা। এ প্রসঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মাস্টার বলেন, ভোটমারীর দক্ষিণ অংশে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ৫টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে একটি মসজিদ, কয়েকটি বসতবাড়ি ও একটি বিদ্যালয়। দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৃষ্টি আহবান জানান এই জনপ্রতিনিধি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার রায় জানান, উজানে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় তিস্তার পানি কয়েক দফায় বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। নদীর তীরবর্তী ভাঙনপ্রবণ এলাকার তথ্য সংগ্রহ করে দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, প্রতিটি উপজেলায় ৪০ মেট্রিক টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর তালিকা করে এসব ত্রাণ বিতরণ করা হবে। এর পাশাপাশি শুকনো খাবার, টিন ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হবে প্রয়োজন অনুযায়ী। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে বাড়তি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।
অন্যদিকে সচেতন মহল মনে করছেন, প্রতি বছর এমন দুর্ভোগে পড়লেও স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না। তারা বলছেন, কেবল ত্রাণ নয়, তিস্তা নদীর পূর্ণাঙ্গ খনন ও একটি দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
এফপি/রাজ