ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পৈশাচিক নির্যাতনের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা মাত্র ৯ বছরের ছোট্ট কন্যাশিশু ময়নার জানাজায় মানুষের ঢল নেমেছিল।
পিতা আব্দুর রাজ্জাক বাহরাইন থেকে আসারপর সোমবার (৭ জুলাই) বাদ আসর শাহবাজপুর খেলার মাঠে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয় ময়নাকে। অংশ গ্রহণকারী সহস্রাধিক লোকের চোখেই ছিল অশ্রু। তারা এ হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারী দেন তারা।
গত রবিবার (৬ জুলাই) সকালে শাহবাজপুর হাবলীপাড়া জামে মসজিদে মক্তবে পড়তে যাওয়া বাচ্চারা মসজিদের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে তার মরদেহ দেখতে পায়। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে জানালে ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।
এরআগে শনিবার (৫ জুলাই) বিকেল ৩টায় শিশুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেনি ময়না। সন্ধ্যার পর থেকেই পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিখোঁজ সংক্রান্ত পোস্ট দেওয়া হয় এবং মাইকিংয়ের মাধ্যমে সারা এলাকায় জানানো হয় মেয়েটির সন্ধান চেয়ে। পরে রাতে সরাইল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
ময়নার পিতা আব্দুর রাজ্জাক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার কলিজার টুকরা বুকের ধন যারা কেড়ে নিয়েছে তাদের সর্বোচ্চ বিচার চাই। পুলিশসহ সকল বাহিনীর কাছে আমার অনুরোধ দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করুন। এমন জঘন্য অপরাধীরা যেন কোনো ভাবেই রেহাই না পায়। তাদের ফাঁসি হলে আমার ময়নার আত্মা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
নিহতের মা লিপা আক্তার বলেন, এভাবে যেই নরপশু আমার মেয়েটারে মারছে, আমি হের (তার) এরচে' বেশি শাস্তি চাই, ফাঁসি চাই। তিলে তিলে যেন হের ফাঁসি হয়, আমি নিজ চোখে দেখতে চাই। যে আমার নিষ্পাপ শিশুটিকে এরকম করতে পারছে, তার মনটা এতটুকু কাঁপলো না, সে কি কোনো মায়ের সন্তান নাকি অন্যকিছু? আমি প্রশাসনের কাছে সরকারের কাছে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
এদিকে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সহমর্মিতা জানাতে আসছেন ময়নাদের বাড়িতে। সকলেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ বিচারের দাবি করছেন। ফেসবুকে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ ময়নার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিচার দাবি করছেন।
শিশুটির মরদেহ উদ্ধারের প্রায় ২৪ ঘণ্টার মাথায় সোমবার (৭ জুলাই) সকালে সরাইল থানায় ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন নিহত মা নীপা আক্তার। মামলায় সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামি করা হয়নি, বরং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তপন সরকার জানান, ঘটনার পরপরই জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মসজিদের মুয়াজ্জিনসহ ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। শিশুটি হত্যার আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাটি পিবিআই, সিআইডিসহ একাধিক সংস্থা তদন্ত করছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, বিষয়টি লোমহর্ষক, মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। পুলিশ বিভাগসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে খুবই গুরুত্বসহকারে কাজ করছেন। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই অপরাধীকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন।
এফপি/রাজ