পাবনা সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে চলছে চরম স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অনিয়ম। সাব-রেজিস্ট্রার আশীষ কুমার সরকারের ব্যক্তিগত ছুটি ও দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে সরকারি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য আসা সাধারণ মানুষ, দলিল লেখক ও সেবাগ্রহীতারা চরম হয়রানি ও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। একই সঙ্গে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঈদের আগে এক কর্মদিবসে দুপুর ২টার দিকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে কার্যালয় ত্যাগ করেন আশীষ কুমার সরকার। তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন এবং তার ফোন বন্ধ করে দেন। অথচ সেদিন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল জমা দেওয়া হয়, যার রেজিস্ট্রির জন্য দলিলদাতা ও গ্রহীতারা দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় ছিলেন। সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ত্যাগের আগে শুধু অফিস সহকারীকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন ফিরে এসে কাজ করবেন, কিন্তু আর ফিরে আসেননি।
পরে জানা যায়, তিনি ঢাকায় গিয়ে নিবন্ধন পরিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজিআর)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ছুটির আবেদন করেন। তবে মহাপরিদর্শক ছুটি বা বদলির আবেদন গ্রহণ না করে তাকে কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। আগামী ১৫ জুন থেকে যথারীতি অফিস চালু রাখারও নির্দেশ প্রদান করেন।
সাব-রেজিস্ট্রারের দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে বর্তমানে জমা দেওয়া ৬১টি দলিল সরকারি নির্ধারিত চালানের মাধ্যমে দাখিল হলেও তা এখনও রেজিস্ট্রি হয়নি। দলিল লেখক, দলিলদাতা ও অন্যান্য সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে এতে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করে সাময়িকভাবে অফিস কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
১৩ জুন শুক্রবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আশীষ কুমার সরকার সাংবাদিকদের জানান, তিনি এখনই অফিসে ফিরছেন না এবং আরও কয়েকদিন ছুটিতে থাকবেন।
এ বিষয়ে প্রধান সহকারী জহিরুল ইসলাম এবং মোহরার-২য় রফিকুল ইসলাম কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তবে পেশকার দেলোয়ার রহমান জানান, সাব-রেজিস্ট্রার সর্বশেষ ১ জুন অফিস করেন এবং পরদিন ডিসি অফিসে একটি বৈঠকে অংশ নিয়ে ঢাকায় চলে যান। এরপর থেকে তিনি অফিসে আসেননি।
অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও গোপন কার্যক্রমের অভিযোগ খুঁজতে গিয়ে অফিস ঘুরে দেখা যায়, সব সিসিটিভি ক্যামেরা ঘুরিয়ে দেয়ালের দিকে মুখ করে রাখা হয়েছে, ফলে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, অনৈতিক কর্মকাণ্ড আড়াল করতেই এমনভাবে ক্যামেরা সরানো হয়েছে। ক্যামেরা স্থাপনে সরকারের বিপুল পরিমাণ ব্যয় হলেও বর্তমানে তা কোনো কাজে আসছে না।
এছাড়াও দেখা গেছে, অফিসের সব লাইট, ফ্যান ও এসি চালু রেখে দরজা খোলা রাখা হয়েছে, যা বিদ্যুৎ অপচয়ের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এর ফলে সরকারের রাজস্ব যেমন অপচয় হচ্ছে, তেমনি জনসম্পদ ব্যবহারের প্রশ্নে উদাসীনতারও প্রমাণ মিলছে।
সচেতন মহল বলছে, পাবনা রেজিস্ট্রার অফিসে চলমান এই অব্যবস্থা ও অনিয়ম অব্যাহত থাকলে তা শুধু জনসাধারণের দুর্ভোগই বাড়াবে না, বরং সরকারি রাজস্ব, ন্যায়বিচার এবং দাফতরিক শৃঙ্খলাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিতে পারে।
এফপি/রাজ