জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার হিমাইল গ্রামে চার বছরের শিশু রদিয়া আক্তার রুহিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।
নিখোঁজ হওয়ার ছয় দিন পর পরিবারের নিজস্ব টয়লেটের টাংকি থেকে উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে শিশুটির সৎমা সোনিয়া আক্তার, চাচা রনি এবং সৎনানা জিয়া কসাইকে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা তিনজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
রুহি ছিলেন হিমাইল গ্রামের আব্দুর রহমানের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে। তার মা কাছের গ্রামে বসবাস করেন, রুহি প্রায় প্রতিদিন বাবার বাড়িতে দাদির সঙ্গে দেখা করতে যেত। গত ২৪ মে সকালে দাদির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন মা। সৎমা ও চাচা জানান, দাদি বাড়িতে না থাকায় রুহিকে নাকি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন।
গত ২৫ মে শিশুটির মা কালাই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। সন্দেহভাজন হিসেবে জেরা করা হয় সৎনানা জিয়া কসাইকে। একপর্যায়ে তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন-তার মেয়ে সোনিয়া, রুহির চাচা রনি এবং তিনজন মিলে শিশুটিকে হত্যা করে বাড়ির টয়লেট টাংকিতে ফেলে দেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সৎ মায়ের সঙ্গে শিশুটির সম্পর্ক ভালো ছিল না। পরকীয়া ও পারিবারিক কলহের জেরে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে মরদেহ গুম করা হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।
৩০ মে রাতে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে এবং তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, তিনজনই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একজন নিষ্পাপ শিশুকে পারিবারিক দ্বন্দ্বে বলি হওয়াটা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়- এটি আমাদের সমাজের গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি। সৎ সম্পর্ক, পারিবারিক সহিংসতা ও অবহেলা কীভাবে চূড়ান্ত ট্র্যাজেডিতে রূপ নিতে পারে, তার নির্মম উদাহরণ হয়ে থাকবে রুহির ঘটনা।
রুহির মতো হাজারো শিশু পরিবারে অবহেলার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই হত্যাকাণ্ড শুধু তিনজন অপরাধীর বিচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না—এটি হওয়া উচিত একটি সামাজিক আন্দোলনের সূচনা, যেখানে প্রতিটি শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র একযোগে দায়িত্ব নেবে।
এফপি/রাজ