বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্ম জয়ন্তী পালন করা হয়েছে।
২৫ মে রোবিবার দিন ব্যাপি চলে এই অনুষ্ঠান। এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় প্রথমে কবির স্মৃতিবিজড়িত স্থান মিশনপাড়ার আটচালা ঘরের পাশে স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পনের মধ্যদিয়ে ১২৬ তম জন্ম জয়ন্তীর অনুষ্ঠান শুরু হয়।
কবির স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সহ সামাজিক সাংস্কৃতিক কবি সাহিত্যিক ও কবি প্রেমীগণ।
পুষ্পমাল্য অর্পন শেষে কবির স্মৃতি স্তম্ভে দাড়িয়ে কবির আত্নার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মোনাজাত করা হয়।
এর পর সকাল ১০টায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে কার্পাসডাঙ্গা শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হয়।
শোভাযাত্রা শেষে সকাল ১১টায় কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তিথি মিত্র, দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি মোঃ হুমাউন কবির, দর্শনা থানা বিএনপি সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খাজা আবুল হাসনাত, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপি সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, সাধারন সম্পাদক রফিকুল হাসান তনু, আটচালা ঘর মালিক প্রকৃতি বিশ্বাস, জেলা জাসাস সভাপতি মোঃ সহিদুল হক, কবি কাজল মাহমুদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহবায়ক আসলাম আলি অর্ক, কার্পাসডাঙ্গা ইউ পি চেয়ারম্যান মোঃ আঃ করিম সহ স্থানীয়রা বক্তব্য রাখেন। বিকালে একই মঞ্চে কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সন্ধায় রিক্তের বেদন নাটক মঞ্চস্থ হয়।
উল্লেখ্য, ১৯২৬ ও ১৯২৭ সালে কবি কার্পাসডাঙ্গায় দীর্ঘসময় অবস্থান করেন। ওই সময় কার্পাসডাঙ্গার ভৈরব নদের তীরে বসেই সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রচনা করেছেন তিনি। টানা দুই মাস কবি হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের আটচালা ঘরে ছিলেন। হর্ষপ্রিয় বিশ্বাস ছিলেন তৎকালীন নদীয়া কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। এখন তাঁর উত্তরসূরিরা নিজ অর্থ ব্যয় করে নজরুলের স্মৃতিঘেরা বাড়িটি টিকিয়ে রেখেছেন।
১৯২৬ সালে বিপ্লবী হেমন্ত কুমার ও মহিম সরকারের আমন্ত্রণে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে নদীপথে সপরিবারে কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। সে সময় ভারতবর্ষে চলছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। আন্দোলনের হাওয়া বয়ছিল কার্পাসডাঙ্গায়ও। কবি নজরুল গঠন করেছিলেন ‘শ্রমিক প্রজা কৃষক পাটি’। মূলত স্বদেশি আন্দোলনের নেতাদের উৎসাহ দিতেই পার্টির পক্ষে কবি কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। এখানকার জীবনযাত্রা ও পরিবেশ তাঁকে সাহিত্যকর্ম মৃত্যুক্ষুধা ও পদ্মগোখরো এবং লিচুচোর কবিতাসহ অনেক গান লিখতে সহায়ক হয়েছিল। স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িতে এখন থাকছেন হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের ছেলে প্রদ্যুত বিশ্বাসের দুই ছেলে-প্রকৃতি বিশ্বাস ওরফে বকুল বিশ্বাস ও মধু বিশ্বাস। যে ঘরে কবি থাকতেন সেই ঘরে সস্ত্রীক থাকেন বকুল বিশ্বাস।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি ধরে রাখতে ১৯৯০ সালে কবির জন্মজয়ন্তী উৎসব পালন এবং নজরুল মেলাও বসেছিল এই কার্পাসডাঙ্গায়।
২০১৬ সালে কার্পাসডাঙ্গা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত ৮ চালা ঘরে পশে স্মৃতিস্তম তৈরি করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম । ২০২১ সালে কবি নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত আটচালা ঘর ও ভৈরব নদীর ঘাটলার সিঁড়ি কিছুটা সংস্করণ করেন তৎকালীন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোঃ নজরুল ইসলাম সরকার। এছাড়া কার্পাসডাঙ্গায় ইউনিয়ন পরিষদ মোড়ে একটি নজরুল চত্বর করা হয়েছে। এই নজরুল চত্বর নির্মাণে কাজে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ করে স্থানীয়রা।
এফপি/রাজ