পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা থেকে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। তবে এই আনন্দযাত্রা অনেকের জন্য রূপ নিয়েছে দুর্ভোগে। বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের টিকিটের জন্য যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া, যা কখনো কখনো দ্বিগুণেরও বেশি।
রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০০ টাকার ভাড়া ১২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত টাকা না দিলে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না, আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে মিনি ট্রাকে করে বাড়ি ফিরছেন।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর থেকে ঢাকাগামী বাসগুলোর ভাড়া ৫০০ টাকা হলেও বর্তমানে ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, বাস শ্রমিকরা যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ধমক দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, এবারের ঈদযাত্রায় ৯৮% গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, কেবল ঢাকা ছাড়তেই যাত্রীদের কাছ থেকে ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার বাস-লঞ্চ ও বিভিন্ন গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে চালক, সহকারীর বেতন-ভাতা ও দুই ঈদের বোনাস প্রতিদিনের আদায়কৃত ভাড়ায় ধার্য থাকলেও দেশের কোনো পরিবহনে তা কার্যকর নেই।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে ন্যায্য বাস ভাড়া নিশ্চিতে রাজধানীর বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ডে তদারকি চলছে। তিনি বলেন, কোথাও যদি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়, তাহলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হটলাইনে (১৬১২১) কল দিয়ে অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে বিভিন্ন যানবাহনকে জরিমানা করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে মাছরাঙা ট্রাভেলস, সরকার ট্রাভেলস, কিংস ট্রাভেলসসহ কয়েকটি পরিবহন সংস্থাকে মোট ৪৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের এই নৈরাজ্য বন্ধে যাত্রীদের নিয়ে শক্তিশালী তদারকি টিম গঠনের দাবি জানিয়েছে। তারা মনে করে, যাত্রীদের স্বার্থ রক্ষায় তদারকি টিমে যাত্রী প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের এই চিত্র যাত্রীদের জন্য এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
এফপি/রাজ