Dhaka, Tuesday | 1 April 2025
         
English Edition
   
Epaper | Tuesday | 1 April 2025 | English
পক্ষপাতদুষ্ট উপদেষ্টাদের বের করে দেওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল
৪ দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা
ঘরমুখী মানুষের ঢল, চির চেনা রূপে সদরঘাট
ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি
শিরোনাম:

ঈদ বাজারে পোশাকেই ব্যয় ৮০ শতাংশ

প্রকাশ: সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫, ৮:৩৭ পিএম  (ভিজিটর : ৮)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল ফিতর সামনে রেখে দেশের অর্থনীতি বেশ চাঙা হয়ে উঠছে। রমজানের শেষ দিকে এসে জমে উঠেছে কেনাকাটা। এবারের ঈদে আড়াই লাখ কোটি টাকা বিক্রির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের কেনাকাটায় সাধারণ মানুষ যে অর্থ ব্যয় করছেন, তার ৮০ শতাংশই যাচ্ছে পোশাকের জন্য। রাজধানীর ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা জানান এমন তথ্য।

গত দুই সপ্তাহে বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে নানান শ্রেণি-পেশার অন্তত দেড় শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তাদের প্রায় সবাই জানান, ঈদের কেনাকাটায় মূল ব্যয় হয় পোশাকের জন্য। নতুন পোশাকের পাশাপাশি জুতা, বেল্ট, অর্নামেন্টস, প্রসাধনী, ঘর সাজানোর পণ্য এবং আসবাবপত্রও কেনেন কেউ কেউ।

নতুন পোশাক কিনতে আসা অর্ধশতাধিক ব্যক্তি জানান, ঈদ উপলক্ষে তারা শুধু নতুন পোশাক কিনছেন। বাকিরা নতুন পোশাকের পাশাপাশি কিনেছেন জুতা, অর্নামেন্টস, প্রসাধনী প্রভৃতি। নতুন পোশাক, জুতা, অর্নামেন্টস, প্রসাধনী- সবগুলো পণ্য কেনার কথা বলেছেন অন্তত ১৮ জন। নতুন পোশাকের পাশাপাশি যারা অন্য পণ্য কিনেছেন, তাদের অধিকাংশই জানান পোশাকের জন্যই ব্যয় হয়েছে ৭০-৮০ শতাংশ অর্থ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের বাজারে মূল বিক্রি হয় নতুন পোশাক। পাশাপাশি জুতা, অর্নামেন্টস, প্রসাধনী, ঘর সাজানোর জিনিস এবং কিছু আসবাবপত্রও বিক্রি হয়। তবে ঈদকেন্দ্রিক ক্রেতারা যে অর্থ ব্যয় করেন তার ৮০ শতাংশই যায় পোশাকের জন্য। বাকি ২০ শতাংশ অর্থ অন্য পণ্যে ব্যয় হয়।

নিউমার্কেটে কথা হয় ক্রেতা জুলিয়া আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদে আমার কেনাকাটার জন্য আব্বু পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। এই টাকা দিয়েই ঈদের কেনাকাটা শেষ করবো। চার হাজার টাকার মধ্যে দুটি থ্রি-পিস কিনবো। বাকি টাকা দিয়ে এক জোড়া জুতা ও কিছু অর্নামেন্টস কিনবো।’

তেজগাঁও থেকে নিউমার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের জন্য একটা জিন্স প্যান্ট এবং একটি টি-শার্ট কিনতে এসেছি। এর বাইরে এবারের ঈদে আর কিছু কেনার ইচ্ছা নেই। আমার জুতা, বেল্ট সবকিছু আছে।’

ঈদের মূল কেনাকাটা তো নতুন পোশাক। আমার হিসেবে নতুন পোশাকের জন্যই ঈদের বাজেটের ৭০-৮০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়। পাশাপাশি জুতা, বেল্ট, প্রসাধনী ও ঘরের সৌন্দর্যবর্ধক কিছু পণ্য কেনা হয়, তবে তার জন্য খুব বেশি অর্থ ব্যয় হয় না।–ক্রেতা

পরিবার নিয়ে বসুন্ধরা শপিংমলে ঈদের কেনাকাটা করতে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে এবং ওদের মাকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছি। সবাই নিজের পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা করবো। নতুন পোশাকের পাশাপাশি সবার জন্য নতুন জুতা কেনার ইচ্ছা আছে।’

ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটায় যে অর্থ ব্যয় করেন, সেই অর্থ কোন খাতে কেমন ব্যয় হয়? এমন প্রশ্ন করলে এই বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘ঈদের মূল কেনাকাটা তো নতুন পোশাক। আমার হিসাবে নতুন পোশাকের জন্যই ঈদের বাজেটের ৭০-৮০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়। পাশাপাশি জুতা, বেল্ট, প্রসাধনী ও ঘরের সৌন্দর্যবর্ধক কিছু পণ্য কেনা হয়, তবে তার জন্য খুব বেশি অর্থ ব্যয় হয় না।’

রাজধানী সুপার মার্কেটে কথা হয় যাত্রাবাড়ী থেকে আসা কেয়া ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটা বলতে আমি মূলত বুঝি নতুন পোশাক কেনা। প্রতিবছরই ঈদে নতুন পোশাক কিনি, এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। আব্বু টাকা দিয়েছেন, আমি আমার পছন্দ মতো থ্রি-পিস কিনবো। থ্রি-পিসের সঙ্গে মিলিয়ে এক জোড়া কানের দুল কেনার ইচ্ছা আছে।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে এক লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যবসা হয়। তার আগের বছর ২০২৩ সালে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা হয় এক লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। ১০ বছর আগে ২০১৫ সালে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এবার ঈদকেন্দ্রিক আড়াই লাখ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

ঈদকেন্দ্রিক বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবারের ঈদকেন্দ্রিক বিক্রি পরিস্থিতি বেশ ভালো। তবে মূল বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। চাকরিজীবীরা কেবল বোনাস পাচ্ছেন। আমরা আশা করছি, এখন থেকে সামনের দিনগুলোতে বিক্রি পরিস্থিতি ভালো হবে এবং আমরা যে প্রত্যাশা করছি বিক্রি তার কাছাকাছি থাকবে।’

এবছর ঈদে কত টাকা বিক্রি হবে বলে আপনারা আশা করছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঠিক কত টাকার ব্যবসা এটা এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না। এটা রোজার পর বলা যাবে। তবে আমরা আশা করছি এবারের ঈদকেন্দ্রিক আড়াই লাখ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। আমাদের এই টার্গেট পূর্ণ হবে কি না, সেটা বলতে পারছি না। কারণ এবার পণ্যের দাম কিছুটা বাড়তি। অবশ্য আমরা আশাবাদী আড়াই লাখ কোটি টাকার ব্যবসা না হলেও বিক্রি পরিস্থিতি আমাদের প্রত্যাশার কাছাকাছিই থাকবে।’

ঈদ উপলক্ষে নতুন পোশাকের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পণ্যও বিক্রি হয়। ক্রেতাদের অনেকেই জানিয়েছেন ঈদ বাজারে ৭০-৮০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয় পোশাকের জন্য। আপনাদের হিসাবে ঈদ বাজারের ব্যয় কোন খাতে কী পরিমাণ হয়? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ঈদের বাজারে ৮০ শতাংশের মতো অর্থই পোশাকের জন্য ব্যয় হয়, এটাই সত্য। বাকি অর্থ দিয়ে কিছু মানুষ আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক্স পণ্য কেনেন। আর গহনার এত দাম বাড়ছে, মানুষ গহনা কেনা অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের গহনা কেনার শখ এখন নেই। যাদের অঢেল অর্থ তারা হয়তো কিছু গহনা কেনেন।’

ঈদ উপলক্ষে জুয়েলারি পণ্য বিক্রি এবার খুব একটা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সাবেক সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া। তিনি  বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে ঈদ বলতে বাচ্চাদের আনন্দকে বোঝায়। জুয়েলারির বিক্রি এখন নেই। এখন মূলত মেয়েদের পোশাক, জুতা, পাঞ্জাবির দোকানে অসম্ভব ভিড় থাকে। এর বাইরে নারীদের প্রসাধনী ও সাজসজ্জার পণ্য ভালো বিক্রি হয়। জুয়েলারি পণ্য তেমন বিক্রি হয় না। হয়তো ঈদের দু-একদিন আগে কিছু বিক্রি হয়।’

ঠিক কত টাকার ব্যবসা এটা এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না। এটা রোজার পর বলা যাবে। তবে আমরা আশা করছি এবারের ঈদকেন্দ্রিক আড়াই লাখ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।- বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন

ঈদ সামনে রেখে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ বেশ বেড়েছে। চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনেই প্রায় আড়াই বিলিয়ন (২৪৪ কোটি ডলার) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২৯ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকার বেশি। সে হিসাবে প্রতিদিন আসছে প্রায় ১১ কোটি ডলার (১৩৫৩ কোটি টাকা) করে। সবকিছু ঠিক থাকলে মার্চে প্রবাসী আয়ের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।

দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে এই রেমিট্যান্স আসে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আসে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে (প্রায় ২৫৩ কোটি ডলার)। ঈদ সামনে রেখে বাকি দিনগুলোতে রেমিট্যান্স আসার ধারা অব্যাহত থাকলে এবার এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসার রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি ঈদকেন্দ্রিক ব্যয়েও তা প্রভাব ফেলবে।

ঈদ উপলক্ষে যে বিক্রি হচ্ছে তাতে সন্তোষ প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এবার বিক্রি ভালো হচ্ছে। রোজার প্রথম কয়েকদিন বিক্রি খুব একটা ছিল না। গত সপ্তাহ থেকে বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। আগামী দিনগুলোতে বিক্রি আরও ভালো হবে বলে আশা করছি।’

কোন ধরনের পোশাক বিক্রি বেশি হচ্ছে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে মেয়েদের সুতি ও জর্জেটের গাউন, থ্রি-পিস, টপস আছে। এবার ক্রেতারা আরামদায়ক সুতি পোশাক বেশি কিনছেন। দেড় হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দামের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে।’

খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, ‘ঈদের মূল বিক্রি হয় শেষ ১০ দিন। সে হিসেবে ঈদের মূল বিক্রি এখন কেবল শুরু হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম একটু বেশি। এজন্য কিছু কিছু ক্রেতা অনেক দামাদামি করছেন এবং ঘুরে ঘুরে পোশাক কিনছেন। এরপরও ইতোমধ্যে যে বিক্রি হয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো বিক্রি হবে।’

এফপি/এমআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: financialpostbd@gmail.com, tdfpad@gmail.com
🔝