গাজায় এক ইসরাইলি সেনা নিহতের পর ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইল। এতে অন্তত ১০৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে ৪৬ শিশু ও ২০ জন নারী রয়েছেন।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) ইসরাইল জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি এখনো বহাল রেখেছে তারা। তবে সেনা হত্যার ঘটনায় প্রতিশোধ নিতে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, গাজার উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়ার কাছে এক অস্ত্রভাণ্ডার লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার গাজায় এক ইসরাইলি সেনা নিহত হয়।এ ঘটনাটি সেখানে সহিংসতার সবচেয়ে ভয়াবহ উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই বছরের যুদ্ধ শেষে গত ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর এমন পরিস্থিতি আর দেখা যায়নি।
ইসরাইলের অভিযোগ, মঙ্গলবার গাজায় ‘ইয়েলো লাইন’-এর ভেতরে হামলা চালিয়ে তাদের এক সেনাকে হত্যা করে হামাস। তবে হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বুধবারের হামলাকে উত্তরে বেইত লাহিয়ার কাছে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছে ইসরাইল। তাদের দাবি সেখানে অস্ত্র মজুদ করা হয়েছে।
ইসরাইলি বাহিনী বলছে, তারা যেকোনো লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলবে।
এদিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমরা যে লক্ষ্য নিয়েছি—গাজা থেকে হামাসকে নিরস্ত্র করা ও অঞ্চলটি সামরিকভাবে নিরপেক্ষ রাখা—তা নিশ্চিত করা হবে। 
ইসরাইলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাস কমান্ডারকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়। এক সেনা সদস্যের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় সেনাবাহিনী উপত্যকাজুড়ে কয়েক ডজন হামাস সদস্য, সেই সঙ্গে গ্রুপটির অস্ত্রের ডিপো এবং টানেল লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
এতে ২৪ জন হামাস সদস্যকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন হামাস কমান্ডারও রয়েছেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যিনি কিনা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলায় অংশ নিয়েছিলেন।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত ১০৪ জনের মধ্যে ৪৬ জন শিশু এবং ২০ জন নারী রয়েছেন।
গাজার নুসেইরাতে এক হামলায় পুরো আবু দালাল পরিবার নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা লাশ নিয়ে শোক মিছিল বের করেন স্থানীয়রা।
এদিকে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা সরকারের গণমাধ্যম কার্যালয় ইসরাইলের ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করে এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি ইসরাইলের ধারাবাহিক মিথ্যাচার, যার উদ্দেশ্য বেসামরিক লোকজনের ওপর চালানো যুদ্ধাপরাধ ঢেকে রাখা। 
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধবিরতি এখনো ঝুঁকিতে নেই। তার ভাষায়, ইসরাইলিরা যখন আক্রান্ত হবে, তখন পাল্টা জবাব দেবে—এটাই স্বাভাবিক।
ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি-বন্দি বিনিময় চুক্তিকে তার দ্বিতীয় মেয়াদের শীর্ষ পররাষ্ট্র নীতি অর্জনগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে তুলে ধরেন।
এদিকে মধ্যস্থতাকারী কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-থানি এই সহিংসতাকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক ও উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এফপি/অ