শিরোনাম: |
আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার সরকারি দ্বারকানাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র, উপজেলা কমপ্লেক্স নবীনগরের মো. মোস্তফা মিয়া ও সাজনা বেগমের পুত্র ১৫ বছর বয়সী কিশোর তোফায়েল আহমেদ। বিজ্ঞান, শিক্ষা, পরিবেশ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি মনোনীত হয়েছেন ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের (International Children's Peace Prize) জন্য।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংগঠন 'কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন' প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিশুদের অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার প্রদান করে। সেই তালিকায় এবার স্থান পেয়েছেন বিজ্ঞানমনস্ক অধিকারকর্মী বালাগঞ্জের এই কিশোর তোফায়েল আহমেদ। দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের অধিকার, জলবায়ু ন্যায্যতা ও প্রযুক্তিশিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন 'বিজ্ঞান ক্লাব', যার মাধ্যমে সহপাঠীদের STEM (Science, Technology, Engineering and Mathematics) শিক্ষায় আগ্রহী করে তুলেছেন।
তিনি শিশুদের ডিজিটাল নিরাপত্তা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও শিক্ষায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। পাশাপাশি মেয়েদের বিজ্ঞানচর্চায় অংশগ্রহণেও উৎসাহ দিচ্ছেন।
বিজ্ঞানের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়াতে তোফায়েল রচনা করেছেন দুটি বই— "A Manual to Modern Physics" ও "A Journey to the Center of the DNA"। তার উদ্যোগে পরিচালিত কর্মশালা ও মেন্টরিং প্রোগ্রামে ইতিমধ্যে এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নিয়েছে।
শিক্ষা ও বিজ্ঞানের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা ও উদ্ভাবনেও রয়েছে তার সক্রিয় ভূমিকা। তিনি সৌরশক্তিচালিত ইকো-হাব ভেহিকল, কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক তৈরির প্রযুক্তি এবং স্বল্প-সম্পদ অঞ্চলের জন্য পোর্টেবল পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র উদ্ভাবনের কাজ করেছেন।
তার অসাধারণ নেতৃত্ব ও উদ্ভাবনী চিন্তার স্বীকৃতিস্বরূপ তোফায়েল হয়েছেন WISPO ও IYRIC প্রতিযোগিতার ফাইনালিস্ট এবং ২০২৪ সালের NASA Space Apps Challenge-এ গ্লোবাল নমিনি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন।তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি বিশ্বাস করি, জ্ঞান ও উদ্ভাবনই পারে পৃথিবীকে আরও ন্যায্য, সবুজ ও নিরাপদ করে তুলতে। এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
তোফায়েলের মা সাজনা বেগম ছেলের সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এটা আমাদের পরিবারের জন্য যেমন গর্বের, তেমনি পুরো দেশের জন্য আনন্দের খবর। ছোটবেলা থেকেই তোফায়েল পড়াশোনার পাশাপাশি নতুন কিছু ভাবতে ভালোবাসে। তার এই সাফল্য আমাদের চোখে আনন্দের অশ্রু এনে দিয়েছে। আমি দোয়া করি, আমার ছেলে যেন ভবিষ্যতে দেশের ও বিশ্বের কল্যাণে আরও বড় অবদান রাখতে পারে। শিক্ষকদের মতে, তার কর্মকাণ্ড শুধু শিশুদের জন্য নয়, সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
তোফায়েল আহমেদ বলেন ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে শিশুদের কল্যাণে কাজ করতে এই পুরস্কার উৎসাহ জুগিয়েছে। শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
এফপি/অআ