চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে তোফাজ্জল নামের মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নারাজি দাখিল করা হয়েছে।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট সেলিম জাবেদ নারাজি দাখিল দাখিল করেন। মামলার তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি মর্মে তিনি এ নারাজি দাখিল করেছেন। দুপুরে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘‘বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে তারা এ নারাজি দাখিল করেছেন। আমরা চাচ্ছি, আদালত যেন চার্জশিটটি গ্রহণ করে বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেন।’’
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরের দিন শাহবাগ থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ।
গত ৩০ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টর মো. আসাদুজ্জামান। চার্জশিটে প্রতিষ্ঠানের ২১ শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
চার্জশিটভূক্ত আসামিরা হলেন- ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন, ভূগোল বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ, ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ, ওয়াজিবুল আলম, ফিরোজ কবির, আব্দুস সামাদ, শাকিব রায়হান, ইয়াসিন আলী, ইয়ামুজ্জামান ইয়াম, ফজলে রাব্বি, শাহরিয়ার কবির শোভন, মেহেদী হাসান ইমরান, রাতুল হাসান, সুলতান মিয়া, নাসির উদ্দিন, মোবাশ্বের বিল্লাহ, শিশির আহমেদ, মহসিন উদ্দিন ও আব্দুল্লাহহিল ক্বাফি। এর মধ্যে, প্রথম ছয় জন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে মোহাম্মদ আমানুল্লাহ উল্লেখ করেছেন, ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে এক যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে যান।
মোবাইল চুরির অভিযোগ করে তারা ওই যুবককে চর-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারেন। জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক তার নাম তোফাজ্জল বলে জানান। পরে তিনি মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ানো হয়। এরপর তাকে হলের দক্ষিণ ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র মারধর করে। এতে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার কয়েকদিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শাহ মুহাম্মদ মাসুমসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের ফুফাতো বোন মোসা. আসমা আক্তার। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলার সঙ্গে এ মামলা একইসঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেন।
এফপি/এমআই