ঈদের লম্বা ছুটিতে শ্রীমঙ্গলের পর্যটন স্পটগুলোতে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছিল। বিশেষ করে ঈদের দিন থেকে বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত পর্যটকের ঢল অব্যাহত ছিল।
১০ দিনের টানা ছুটিতে দেশি বিদেশি হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন স্পটগুলো। ৫ জুন ছুটি শুরু হলেও বিশেষ করে ঈদের দিন থেকে শ্রীমঙ্গলে পর্যটকের ঢল নামে। এছাড়া ঈদের আগেই রির্সোট-কটেজগুলো অগ্রীম বুকিং হয়ে যায়। হাওর, নদী, পাহাড়, টিলা, চা-বাগান বেস্টিত শ্রীমঙ্গলের অপার সৌন্দর্য ও প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটক ছুটে আসেন শ্রীমঙ্গলে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গলের চা বাগান, চা-কন্যা ভাস্কর্য, বধ্যভূমি ৭১, দার্জিলিং টিলা, চা গবেষনা ইনস্টিটিউট, বাইক্কা বিল, ভাড়াউড়া লেক, শংকর টিলা, হাইল হাওর, বন্যপ্রানী সেবা ফাউন্ডেশন, টি রিসোর্ট, চা জাদুঘর, রাবার বাগান, লাল টিলা, গলফমাঠ প্রভৃতি পর্যটন স্পট ছিল লোকে লোকারন্য। পর্যটকরা ট্যুরিস্ট জিপ, বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, মটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে এক স্পট থেকে অন্য স্পটে ঘুরে বেড়িয়েছেন। যেকারণে এ কয়েকদিন সড়কে ছিল যানবাহনের প্রচন্ড চাপ।
দেশের অন্যতম পর্যটন উপজেলা শ্রীমঙ্গল। এ উপজেলায় রয়েছে প্রায় শতাধিক ছোট-বড় পর্যটন স্পট। এ ছাড়া এ উপজেলায় রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি। প্রতিবছর ঈদে বিপুলসংখ্যক ভ্রমণপিপাসু পর্যটকের সমাগম হয় শ্রীমঙ্গলে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
ঈদের টানা ১০ দিনের ছুটিতে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ছিল এখানকার বিভিন্ন পর্যটন স্পট ও রিসোর্ট, কটেজ, বাংলোগুলো। দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসুদের প্রথম পছন্দ হলো শ্রীমঙ্গলের পর্যটন স্পটগুলো। শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সেলিম আহমদ জানান, ঈদের আগে শেষ মুহুর্তে শ্রীমঙ্গলের সব রিসোর্ট, কটেজ, হোটেল, বাংলো শতভাগ বুকিং হয়ে যায়। কোথাও কোনো খালি ছিল না। শহরের খাবার হোটেলগুলোতেও তিল ধারণের ঠাই ছিলো না।
শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রাণী বিভাগ সূত্র জানায়, ঈদের দিন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫ দিনে শুধুমাত্র লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটক এসেছিল ৫ হাজার ১৩১ জন। যা থেকে রাজস্ব আয় হয় ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮০ টাকা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলায় রয়েছে উঁচু-নিচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের গালিচায় মোড়ানো ৪৪ টি চা-বাগান। এছাড়া মণিপুরি, খাসিয়া, ত্রিপুরা, সাওতালসহ আরো অনেক নৃ-তাত্বিক জনগোষ্টির বাস। আছে লেবু-আনারস বাগানসহ শতাধিক মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট।
এছাড়াও পর্যটকদের একটি বড় অংশ শ্রীমঙ্গলের নৃ-তাত্বিক জনগোষ্ঠীর পাড়াগুলোতে তাদের বিচিত্র জীবনধারা ও সংস্কৃতি দেখে মুগ্ধ হন। তাদের হাতের বোনা তাঁতের কাপড় কিনতেও পর্যটকরা ভুল করেন নি। নৃ-গোষ্ঠির মানুষের আতিথেয়তায় পর্যটকরা হন মুগ্ধ।
শ্রীমঙ্গল ট্যুরিস্ট পুলিশ সুত্র জানায়, ‘ঈদের বন্ধে পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রতিটি পর্যটন স্পটে পর্যটন পুলিশ নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। এছাড়াও মোবাইল টিম নিরাপত্তায় কাজ করছে।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, টানা ১০ দিনের ছুটিতে শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াতে পারে সেজন্য শ্রীমঙ্গল পুলিশ সার্বক্ষণিক তৎপর আছে। এছাড়া পর্যটন স্পটগুলোতে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি পুলিশের মোবাইল টিম পর্যটকদের নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এফপি/রাজ