ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের তৈলকূপ গ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত বেগবতি নদী। এই নদির উপর একটি সেতুর অভাবে ভাঙ্গাচুরা বাঁশের সাঁকো দিয়েই পারাপার হতে হয় ৪ ইউনিয়নের অন্তত ৫ গ্রামের মানুষের।
কালীগঞ্জ শহরসহ অনান্য এলাকায় আসা যাওয়া করার জন্য এই বাঁশের সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিদের বারবার প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্থ হলেও আজো পূরণ হয়নি তাদের সেতুর স্বপ্ন। স্থানীয়দের দুর্ভোগের দিন যেন শেষ হবার নয়। তবুও আশায় বুক বেঁধে আছেন তারা। দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ হলে ভুক্তভোগীদের দুঃখ ঘুচবে এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
অনেক আগে নলডাঙ্গা রাজবাড়ির পাশে একটি চিকন সেতু নির্মাণ করা হলেও সেটি এখন একেবারেই চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। আবার সেই সেতু দিয়ে পার হতে গেলে অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। এবং সেতুটি এতোই চিকন যে কোন রকম একটি ভ্যান গাড়ি মালমাল নিয়ে পার হওয়া দুষ্কর।
তৈলকূপ গ্রামটি এমনই এক গ্রাম, যে গ্রামকে এক বেগবতি নদীই তিন দিক দিয়ে প্রবাহিত। শুধুমাত্র নলডাঙ্গার বাজারের পাশে উন্মুক্ত যে কারণে ভারী কোন ফসল বা অন্যান্য মালামাল পরিবহন করতে হলে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয় জেলা ও উপজেলা শহরের হাট বাজারে। এজন্য চলাচলের জন্য প্রতি বছর চাঁদা তুলে নির্মাণ করা হয় বাঁশের সাঁকো। বছর পার হতে না হতেই বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। প্রতি বছরই সাঁকো নির্মাণে খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা।
সাঁকো পার হয়ে শহরে যেতে সময় ও অর্থ দুটোই ব্যয় হয়। ভারি যানবাহন চলাচল করতে না পারায় রোগী বহন করতে স্বজনদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। অনেক দূরের রাস্তা ঘুরে আসতে হয় শহরে। কৃষিপণ্য আনা নেওয়ায় কৃষকদের পড়তে হচ্ছে কষ্টে। সময়মতো কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে না পারায় বাজার মূল্য থেকে বঞ্চিত হন এই অঞ্চলের কৃষকেরা। পরিবহন খরচ বাড়ে দ্বিগুণ।
এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন বয়সের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হাজার হাজার মানুষ নদী পারাপারের জন্য একমাত্র ভরসা বাঁশের সাকো। আবার এ সাঁকো নির্মাণের ছয় মাস যেতে না যেতেই তা নদীর পানির তোড়ে ভেঙ্গে যায়। ডোঙ্গায় পারপার হতে গিয়ে অনেকেই নদীর পানিতে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাদের বই পুস্তক নিয়ে নদীর পারাপার হতে গিয়ে অনেকেই নদীতে পড়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান জানান, প্রতিদিন বেগবতি নদীর ওপর তৈরি এই দুর্বল বাঁশের সাঁকো দিয়ে আতংকিত ভাবে পারাপার হতে হয়। মনে সব সময় ভয় কাজ করে কখন যেন ভেঙে পড়ি পানিতে। তবুও উপায় না থাকায় এদিক দিয়েই যাতায়াত করি। ডিজিটাল যুগেও বাঁশের সাঁকো এটি বড়ই বেমানান প্রথা।
তৈলকূপী গ্রামের নদি পাড়ের নুরজাহান বেগম জানান, বর্ষার সময় তালের ডোঙ্গা দিয়ে পার হতে হয়। পানি কমে গেলে বাঁশের সাঁকো। জরুরি চিকিৎসা নিতে শহরে গেলে এখানে অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আমাদের দুর্দশা ঘুচাতে সরকারি সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কলেজ ছাত্রী জানান, তিনি যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিদিন ঐ ভাঙ্গাচোরা বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হয়ে নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বারোপাখিয়া মসজিদের মোড়ে এসে তাকে ইজি বাইক, ভ্যান অথবা লাটা হাম্বারে চড়ে কালীগঞ্জ শহরে পৌঁছান। এরপর বাসে চেপে তাকে যশোর যেতে হয়।
তিনি বলেন, এ নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা বর্ষার সময় তালের নৌকা (ডোঙ্গা) আর এখন একটি বাঁশের সাঁকো।
কালীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী সৈয়দ শাহরিয়ার আকাশ বলেন, তৈলকূপী গ্রাম এবং রাজবাড়ির পাশে যে পুরাতন সেতুটি আছে সেখানে আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে নতুন করে একটি সেতু নির্মানের জন্য টেন্ডার দিবো কিন্তু দু’পাড়ের বসতিরা জায়গা দিচ্ছে না এজন্য টেন্ডার করাতে পারছি না।
সেতুটির ডিজাইন আছে ১৮ ফুট, সেখানে আমার জায়গা লাগবে ২৪ ফুট। কিন্তু নদীর ওপারে দুই পাকা বাড়ি আছে তারা জায়গা দিচ্ছেন না। এ কারণে সেখানে সেতুর নির্মাণ করার প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আর আপনি নতুন যে জায়গার কথা বলছেন, সেটা আমার নলেজে নেই। যদি এলাকাবাসী জায়গা নির্ধারণ করে তাহলে তারা জেলা প্রকৌশলী অথবা আমার বরাবর আবেদন করলে কর্মকর্তাদের সাথে কথা ব্যবস্থা করা যাবে।
এফপি/রাজ